|
Date: 2023-12-26 02:24:37 |
রোকাইয়া সালাম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। রোকাইয়া স্নাতকের চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কখনোই একটিও অ্যাকাডেমিক ক্লাস বাদ দেননি। জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকটা রেখেছেন নিজের হাতে। বর্তমানে স্পেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন বেরোবির সাবেক এই শিক্ষার্থী।
ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সব ক্লাস করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন আজও। নাটোরের সিংড়ায় জন্ম নেওয়া রোকাইয়ার বাবা পেশায় একজন প্রকৌশলী। মা ছিলেন ব্যবসায়ী।
২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পান রোকাইয়া। এরপর ভর্তি হন বেরোবির দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে। যদিও তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে মেডিকেলে পড়বে, ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। ভর্তি পরীক্ষায় তার মেডিকেলে চান্স হয়নি। এরই মধ্যে অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের তারিখও শেষ, একমাত্র বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া। তখন তিনি বেরোবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং সুযোগ পেয়ে যান।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে তার বাবা-মা রাজি ছিলেন না। কিন্তু মেয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে তারা তাকে আর চাপ দেননি। এরপর থেকে সেই পুরোপুরি ক্লাস করা শুরু করে দেয়। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রত্যেকদিন ক্লাস করেন। চার বছরে কোনোদিনও কোনো ক্লাস বাদ দেননি। আর এই ধারাবাহিকতার ফলস্বরূপ জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম হন। ফলে লাভ করলেন ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’। পরে পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে চলে যান।
রোকাইয়া সালাম বলেন, পড়ালেখার জন্য কোনো আলাদা কৌশল অনুসরণ করিনি। মন চাইলে পড়তাম, না চাইলে পড়তাম না। তবে কখনো ক্লাস ফাঁকি দেইনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুদের সঙ্গে প্রচুর ঘুরে বেড়িয়েছি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার পাশে থাকার জন্য আমার অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি নিজেই আমার ওপর হয়ত মাঝেমধ্যে ভরসা হারিয়ে ফেলতাম, কিন্তু তিনি কখনো ভরসা হারাননি। সব সময় পরম স্নেহে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। চতুর্থ বর্ষে এসে স্যারের মাধ্যমে রিসার্চে হাতেখড়ি হয়। আমি ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তার রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছি। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে জয়েন করি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রিজাইন করি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আমি ইরাসমাস মানডাস জয়েন্ট মাস্টার্স স্কলারশিপ নিয়ে জিও স্পেশাল টেকনোলজিস সাবজেক্টে ইউরোপের স্পেন, জার্মানি এবং পর্তুগালে এলাম সেকেন্ড টাইম মাস্টার্স করতে। ফার্স্ট সেমিস্টার স্পেনে শেষ করে এখন আমি জার্মানিতে আছি সেকেন্ড সেমিস্টারের জন্য।
রোকাইয়া ইসলাম আরো বলেন, আমার কাছে যেটা মনে হয়, সফলতা কখনো কাউকে অনুসরণ করে আসে না। সব সময় নিজের সঙ্গেই নিজেকে তুলনা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। নিজের সেলফ ডেভেলপমেন্ট কিসে হবে তা মাত্র সেই ব্যক্তিই জানে, অন্য কেউ নয়। কারণ নিজের দুর্বলতা কোথায় সেটা নিজেকেই খুঁজে বের করতে হয়, অন্য কেউ তা জানে না। নিজের দুর্বলতাগুলোর ওপর ধারাবাহিকভাবে কাজ করলে সফলতা আগে হোক পরে হোক ধরা দেবেই।
সাবেক এই শিক্ষার্থীর অনন্য অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, রোকাইয়া অনেক মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরে সে কখনো কোনো ক্লাস বাদ দেয়নি। সে বর্তমানে পিএইচডি করার জন্য স্পেনে আছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সে সুযোগ পেয়েছে, এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গর্বের। তার এই অর্জন আমার বিভাগের এবং একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়েরও বলতে পারি।
© Deshchitro 2024