নিউজ ডেস্ক: 


মোবাইল ফোন চুরি হওয়া বা ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এমন ঘটলে ফোনের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়। ব্যক্তিগত গোপনীয় অনেক তথ্যও তখন অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ফোন হারিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশের সহযোগিতা নেন অনেকে। এ ধরনের বিপদগ্রস্ত মানুষের ফোন উদ্ধার করে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আব্দুল কাদির। কাজটিকে তিনি প্রায় শখের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। হারানো ফোন খুঁজে বের করার এই চ্যালেঞ্জ জয় করা তিনি দায়িত্ব বলে মনে করেন।


১৯৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল কাদির। বেলকুচি ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০০৫ সালে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। ২০১৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হয়ে বর্তমানে তিনি রাজধানীর গুলশান থানায় কর্মরত রয়েছেন।


আব্দুল কাদির চার হাজারেরও অধিক হারিয়ে যাওয়া, চুরি হওয়া বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এই কাজ তার মনে প্রশান্তি জোগায়। মানুষের উপকার করে পরম তৃপ্তি পাওয়া যায় বলেই আনন্দ নিয়ে এ কাজ করেন তিনি। 


পুলিশের বিভিন্ন কাজ থাকতে হারানো ফোন উদ্ধারের কাজ কেন বেছে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল কাদির 

এক রাতের বর্ণনা দেন। ওই রাতে বাবার কিনে দেওয়া ফোন হারিয়ে কাঁদছিলেন অসহায় এক নারী। ২০১৫ সালের এক রাতের ঘটনা। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আব্দুল কাদির। এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে থানায় আসেন এক নারী। তিনি জানান, মহাখালী থেকে সিএনজি অটো রিকশায় আসার সময় তার ফোন হারিয়ে গেছে। তিনি থানায় ঢুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার অনুরোধ করছিলেন মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য। কারণ ওই ফোনটি ছিল তার বাবার দেওয়া শেষ স্মৃতিচিহ্ন। কিছুদিন আগেই বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। ফোনে বাবার অনেক ছবিও রয়েছে, যা তার কাছে অমূল্য। 




সেই নারীর কান্না দাগ কাটে কাদিরের মনে। বাবার স্মৃতি ধরে রাখার এমন আকুতি তাকেও অশ্রুসিক্ত করে। যেভাবেই হোক ফোন উদ্ধার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করেন ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের সঙ্গে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দেন সেখানে। পুলিশের আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় মাস তিনেক পর বরিশাল থেকে ফোন উদ্ধার করেন আব্দুল কাদির। হারানো ফোনটি যেদিন তিনি ওই নারীকে ফিরিয়ে দেন সেদিন ফোনটি বুকে নিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। তবে এ কান্না আনন্দের। ওই নারীর আনন্দঅশ্রু আব্দুল কাদিরের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। 


সেই থেকে থানায় হারানো ফোন খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ এলেই ডাক পড়ে আব্দুল কাদিরের। আব্দুল কাদিরও সানন্দে সেই ডাকে সাড়া দেন। আর এভাবেই ফোন হারানো মানুষের কাছে তিনি ‘সুপার হিরো’ হয়ে ওঠেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিনই প্রশংসায় ভাসেন এই পুলিশ সদস্য। ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ থেকেও পুরস্কৃত হয়েছেন কাদির। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে টানা ৮ বার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় পুরস্কার আইজিপি ব্যাচ পদক। 


আব্দুল কাদির বলেন, ‘হারানো ফোন ফিরে পেলে মানুষ যতটা খুশি হয় তা আমার জন্য পরম আনন্দের। আমি সব সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটলে গুরুত্ব দেই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ফোন খুঁজে দেওয়ার।’


হারানো ফোন ফিরে পেয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আব্দুল কাদিরের প্রশংসা করেছেন। তেমনই একজন শারমিন রত্না। তিনি লিখেছেন: ‘হারানো মোবাইল খুঁজে আসল মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিখ্যাত ‘মোবাইল জাদুকর হিসাবে পরিচিত এএসআই আব্দুল কাদির’ আমাদের প্রায় প্রতি ফ্যামিলিতে একটি পরিচিত নাম! আড়াই মাস আগে হারিয়ে যাওয়া ফোনটি আজ তিনি আমার হাতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার জন্য যে কোনো বিশেষণ কম হয়ে যাবে। ধন্যবাদ কাদির ভাই।’


মিলন নামে একজন হারানো ফোন ফিরে পেয়ে লিখেছেন: ‘আমার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে গেলে আব্দুল কাদির সাহেবের সঙ্গে পরিচয়। তিন দিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আমার মোবাইল উদ্ধার করে দেন তিনি। একজন সৎ পুলিশের বড় উদাহরণ তিনি।’

হারানো ফোন ফিরিয়ে দিয়ে কাদিরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেন অনুভূতি- ‘কিছু কিছু সময় অন্যের জন্য কিছু করতে পারলে নিজের আনন্দটাই বেশি লাগে। জীবনের আসল মানেটা তখনই ফুটে ওঠে যখন আপনি অন্যের উপকার করার মাঝে নিজের সুখ খুঁজে পান।’



প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024