◾হাসান মাহমুদ শুভ : প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তি, অর্জন -বর্জন মিলিয়ে আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে ২০২৩। রাত ১২ টার পর থেকেই শুরু হয় নতুন বছরের গণনা। গোটা বিশ্ব বরণ করতে যাচ্ছে ইংরেজি বর্ষ ২০২৪। ইংরেজি নববর্ষের শেষ রাতটি" থার্টি ফার্স্ট নাইট " নামে প্রচলিত। কেউ বা আবার "থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর " বলে থাকেন।প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জামশিদ খ্রীস্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রীস্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষের প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারি ইংরেজি নিদিষ্ট করা হয়।"থার্টি ফাস্ট নাইট " কে কেন্দ্র করে চলে অশালীন ও বেহায়াপনার মহোৎসব। তরুণ- তরুণী থেকে সব বয়সের মানুষ "থার্টি ফার্স্ট নাইট " নামক মহোৎসবে মেতে উঠে।


বিশ্বায়নের এই যুগে "থার্টি ফার্স্ট নাইটের  " ঢেউ বাঙ্গালীর সংস্কৃতির সাথে অতপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছে। বিশ্বায়নের সাথে তালমিলিয়ে চলার পথে ইংরেজি বর্ষ অপরিহার্য হলেও সেটা যেন বাঙ্গালীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে সংঙ্কটে না ফেলে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য যে,"থার্টি ফাস্ট নাইট" নামক অপসংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এখন"থার্টি ফার্স্ট নাইট " অর্থাৎ রাত ১২ টার থেকেই আমাদের দেশে শুরু হয় পটকাবাজি, আতশবাজি, গান-বাজনা,আনন্দ শোভাযাত্রা, অশালীন উল্লাস, তরুণ- তরুণীদের মদ -বিয়ারের পানের উল্লাস। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় লাইভ কন্সার্ট, ডিজে -পার্টি সহ তরুণ- তরুণীরা জোড়ায় -জোড়ায় হোস্টেল, পার্ক, উদ্যান,নাইটক্লাব গুলোতে স্বামী -স্ত্রীরির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।যাহা নীতি -নৈতিকতার চরম অবনতি। "থার্টি ফার্স্ট নাইট " উপলক্ষে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে বাংলা গানের পরিবর্তে বাজানো হয় হিন্দি আর ইংলিশ গান।পশ্চিমা অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে বিলুপ্তির পথে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি।


আমাদের আচার -আচরণে, খাবার -দাবারে,পোশাক -পরিচ্ছেদে, খেলাধুলা থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরেই পশ্চিমা অপসংস্কৃতির ছোয়া লেগেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলা ও বাঙ্গালীর হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতি। প্রত্যেকটি জাতির একটা নিজস্ব সংস্কৃতি,ইতিহাসএবং ঐতিহ্য থাকে। 


কিন্তু আমাদের সেই কিন্তু আমাদের সেই চেতনা,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধরন উচ্চ মানের।কারণ আমরাই একমাত্র জাতি যারা ৩০ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছি।আমাদের নিজস্ব এত বড় প্রাপ্তির জায়গা থাকা স্বত্বেও "থার্টি ফার্স্ট নাইট"  এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির কবলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি।সংস্কৃতি পরিধি অনেক বিস্তৃত। যা একটি জাতির নিজস্ব পরিচয় বহন করে। তাই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে মনে প্রানে লালন করতে হবে। আমাদেরকে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের মাতৃভাষার দিকে তাকালেই বুঝা যায় যে,আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতির কবলে কতটা হারিয়ে ফেলেছি নিজস্ব সংস্কৃতিক।


আমরা কথায় কথায় বাংলিশ আর হিন্দিতে কথা বলি। এমনো দেখা যায় শিশুরা মাতৃভাষা শিখার আগে হিন্দি কিংবা ইংরেজি শিখে ফেলে এর কারণ পশ্চিমা আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব।যা মোটেই কাম্য নয়। যে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাজপথে অকাতরে জীবন দিয়েছিল। আজ সেই বাংলা ভাষা পশ্চিমা ভাষার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে। এটা তো মাত্র  একটা উদাহরণ। আমাদের যে নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন,নবান্ন উৎসব, পৌষে মেলা ইত্যাদি। 


এসব ও আমরা ভুলতে চলেছি।একইভাবে আমাদের নিজস্ব খাবার -দাবার,পোশাক -পরিচ্ছেদ পশ্চিমা অপসংস্কৃতির দখলে।তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সংস্কৃতিতে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো পরিবর্তন হলে জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির সংকটে ভুগবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। "থার্টি ফার্স্ট নাইটে"এমনভাবে উল্লাসে মেতে উঠি মনে হয় "থার্টি ফার্স্ট নাইট " আমাদের জাতীয় উৎসব। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে ও আমরা আমাদের স্বাধীনতা,ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির নিজস্বতা কতটুকু বজায় রাখতে পেরেছি? তা প্রশ্নই রয়ে গেল। 

এমনিতেই "থার্টি ফার্স্ট নাইট " আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বিপরীত। আশার বিষয় হলো যে, ভবনের ছাদে উৎসব আয়োজনে নিষেধাজ্ঞাসহ "থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ উৎযাপনের ক্ষেত্রে  কিছু নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পটকাবাজি,আতশবাজি,বেপরোয়া গাড়ি ও মোটর সাইকেল চালানো সহ যেকোনো ধরনের অশোভন আচরণ ও বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পাশাপাশি মহানগরের গুরত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কঠোর নিয়ম জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।যা সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যেগ।

শুধু ঢাকার মধ্যে নয়, সারাদেশেই প্রশাসনকে ক্রিয়াশীল থাকা উচিত থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে।সর্বোপরি, স্বাধীনতার ৫২ বছর  উপলক্ষ্যে একটাই প্রত্যাশা সকল অপ্রাপ্তি ও অপসংস্কৃতিকে পিছনে ঠেলে এগিয়ে যাবে প্রিয় স্বদেশ। 


• হাসান মাহমুদ শুভ

লেখক ও শিক্ষার্থী


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024