ভোট নিয়ে যখন ব্যস্ত বাংলাদেশ, মধ্যরাতের আগুনে তখন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে আশ্রিত সাত হাজার রোহিঙ্গা।


৭ জানুয়ারি (রোববার) রাত ১ টায় উখিয়ার ৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দ্রুত আগুন পার্শ্ববতী এ, বি ও ডি ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে, নিয়ন্ত্রণে নিতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা।



ভোর চারটার দিকে ফায়ারসার্ভিসের ১১ টি ইউনিট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম।


তিনি বলেন, ” শীতকাল হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তারপরেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে সমন্বিত চেষ্টার কারণে।”


শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অগ্নিকান্ডে ৮৪২ টি ঘরের পাশাপাশি ১২০টির মতো বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো পুড়ে গেছে।


ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার রোহিঙ্গার জন্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন।


তিনি বলেন, ” ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ”


এখন পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের কারণ নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।


আরএসওপন্থী হওয়ায় আরসার সাথে বিরোধ ছিলো সি ব্লকের হেড মাঝি হামিদের, যার ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে রোহিঙ্গাদের ছড়ানো এক হোয়াটস এপ ভিডিওতে বলতে শুনা গেছে।


পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সাথে সাথে অগ্নিকান্ডের রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে এপিবিএন বলে জানান ১৪-এপিবিএনের অধিনায়ক ( অতিঃ ডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল।


শীতকাল হওয়ায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পোহাতে হচ্ছে নিদারুণ দুর্ভোগ। রোহিঙ্গা নারী সামসিদা (৩৪) তার সব অবলম্বন হারিয়ে ৪ সন্তান নিয়ে থাকছেন খোলা আকাশের নিচে।


সামসিদা বলেন, ” আমার স্বামী মায়ানমারের জেলে বন্দী, কোন রকমে আত্নীয় স্বজনদের সহযোগিতায় বেচে আছি। আগুন আমার সব কেড়ে নিয়েছে, জানিনা এই শীতে কি করবো।”


এর আগে সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর শনিবার দিবাগত রাত ২টা বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ব্লকে এই আগুন লাগে। এতে পুড়ে গ আনুমানিক ৫০টি বসতঘর।


২০২৩ সালের ৫ মার্চ ১১ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ব্লকে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ওই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ২ হাজার ২০০ ঘর, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ তিনটি ক্যাম্পে একসঙ্গে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় ১১ জনের মৃত্যু ও পাঁচ শতাধিক আহত হন। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024