শ্রীলঙ্কাকে চরম দুঃসময়ে এক বছর আগে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেয় বাংলাদেশ। সময় দুই দফায় বাড়ানোর পরও তা পরিশোধে ব্যর্থ হয় দেশটি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মধ্যেই সব ঋণ পরিশোধের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে শ্রীলঙ্কা। 


ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর রউফ তালুকদার বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাকে সোয়াপ অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য তিন দফায় আমরা ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) ডলার দিয়েছিলাম। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সময়মতো টাকাটা ফেরত দিতে পারেনি তারা। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরসিংহ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে তিন কিস্তিতে তারা তা পুরোটাই ফেরত দেবেন।’


জানা গেছে, বৈদেশিক ঋণজর্জরিত শ্রীলঙ্কার সংকট বহুমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি, বিরামহীন মূল্যস্ফীতি, সরকারের আয় ও ব্যয় ঘাটতি বা আর্থিক ঘাটতি, ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি, দুর্নীতিসহ একঝাঁক সমস্যায় কাবু হয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় দেশটি। 


বৈদেশিক ঋণের চাপে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি ডলার। চলতি বছরের মধ্যে দেশটিকে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে হবে। অথচ গত আগস্ট পর্যন্ত দেশটরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ১ হাজার ৮১৭ মিলিয়ন ডলার। তার আগেই গত এপ্রিলে দেশটি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ স্থগিত ঘোষণা করে। 


এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাস থেকে সংকট শুরুর পর ভারত ও চীন থেকে ৩০০ কোটি ডলারের মতো ক্রেডিট লাইন পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সম্প্রতি ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার প্রাথমিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে দেশটি, যা আগামী মাসে পাওয়া যেতে পারে। 


আইএমএফের ঋণ শ্রীলঙ্কা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যয় করবে বলে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায়। তাই এ অর্থ দেশটি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিএনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে। তবে, হ্যাঁ যেসব দেশ শ্রীলঙ্কাকে ঝুঁকি নিয়ে ফের ঋণ দেওয়ার কথা চিন্তা করবে, তাদের আইএমএফের ঋণ থেকে দেশটি কিছু ঋণ পরিশোধ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে একই প্রতিবেদনে। 


বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাসের’ গত সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার প্রকৃত জিডিপি চলতি বছর আগর বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ কমবে। ২০২৩ সালে তা আরও ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমবে। 


অন্যদিকে চলতি বছর দেশটির মূল্যস্ফীতি ৬০ অতিক্রম করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইএমএফ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। একই সবসময়ে অর্থনীতিট সংকুচিত হতে পারে প্রায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এ প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত সব পরিসংখ্যান হিসাবে নিলে মনে হয় না, আগামী বছরের মধ্যে শ্রীলঙ্কা উল্লেখযোগ্য কোনো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024