২৭ জানুয়ারি নাঙ্গলকোটের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর ১৯বছরেও নাঙ্গলকোটের মাটি ও মানুষের নেতা খ্যাত প্রয়াত এ সংসদ সদস্যের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা বিদ্যমান।
ছাত্রজীবনে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী কাজী জহিরুল কাইয়ুমকে বিজয়ী করতে তিনি হোমনাবাদে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে অসিম সাহসিকতার সাথে হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু গণ-রায়ের জন্য সংসদ নির্বাচন দিলে ওই নির্বাচনে ফের মনোনয়ন লাভ করেন কাজী জহিরুল ইসলাম কাইয়ুম। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলেও জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়ার বুদ্ধিমত্ত্বায় শেষ পর্যন্ত নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়। জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া ১৯৭৭ সালে ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ক্রান্তিকালে দলের মনোনয়ন লাভ করেন ‘হোমনাবাদের কীর্তি পুরুষ খ্যাত’ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া। তরুণ বয়সে নৌকার কান্ডারী তিনি। জীবনের প্রথম সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, ইউ.পি.পি চেয়ারম্যান পরবর্তীতে এরশাদের মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এম.পি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামীলীগের মাত্র ৩৯ জন এম.পি’র মধ্যে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ছিলেন অন্যতম একজন। প্রথমবার এম.পি নির্বাচিত হয়ে তিনি চৌদ্দগ্রামের হোমনাবাদ অঞ্চল এবং লাকসাম উপজেলার অবহেলিত পাঁচটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা (থানা) গঠনের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। এরই প্রেক্ষিতে একনেকে পাশ করানোর মাধ্যমে নাঙ্গলকোট উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু নীলনকশার নির্বাচনে কারচুপির কারণে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লাভ করেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে দেশী-বিদেশী চক্রান্তসহ একদল কু-চক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরও জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া পরাজিত হয়। প্রয়াত জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জীবদ্দশায় জনকল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। নাঙ্গলকোটের উন্নয়নে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি সবার সাথে প্রাণ খুলে মিশতেন বলে ‘‘জয়নাল ভাই’’ নামে খ্যাতি অর্জন করেন। অনেকে তাকে ‘‘নাঙ্গলকোটের বঙ্গবন্ধু’’ বলে ডাকতেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটবাসীকে নিঃশব্দে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে যান। তাঁর তিনটি জানাজায় লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করে। যা আজো নাঙ্গলকোটের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে আছে। নিজ বাড়ি বদরপুরে বাড়ির পার্শ্বে পুকুর ধারে সবুজ বৃক্ষে ঘেরা শ্যামল মাটিতে তাকে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয় এ গুণী রাজনীতিবিদকে।
মৃত্যুর ১৯ বছরেও নাঙ্গলকোটের মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা বিদ্যমান। এখনো এখানকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়াকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। একজন জনদরদী-দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি নাঙ্গলকোটবাসীর হৃদয়ে চিরঞ্জীব। আর এ জন্যই নাঙ্গলকোটের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্টেডিয়াম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণের দাবি জানান।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023