রাজনীতি থেকে নাঙ্গলকোটের মানুষ উঠে গেছে, তারা আজ ব্যক্তির কাছে জিম্মি। ১৯৪৭ সালের পর যেভাবে ২৫বছর  বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে গত ১৫ বছর যাবৎ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটকে উন্নয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা অর্থমন্ত্রী পেয়েছি এছাড়া আর কিছুই পাইনি। এখন থেকে আমিবনাঙ্গলকোটের বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকবো। 

২৭ জানুয়ারী শনিবার বিকেলে কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের প্রয়াত সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার ১৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢালুয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও আওয়ামীলীগ নেতা নঈম নিজাম ভূঁইয়া এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এমপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তার মাধ্যমে নাঙ্গলকোটের মানুষের কোন ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, হয়েছে উনার নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন। উনার ২০তলা ভবন অনিয়ম করে হয়ে গেছে ২৮তলা।

এসময় তিনি আরও বলেন, যেখানে সিন্ডিকেট সেখানেই প্রতিবাদ। কোন নিয়োগ বানিজ্য আর নাঙ্গলকোটে চলতে দেয়া হবে না, কেউ নিয়োগের জন্য টাকা দিবেন না, যদি কেউ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে যেকোন নিয়োগে আপনাদের কাছে টাকা চায় তাহলে টাকা না দিয়ে ভিডিও, অডিও ধারণ করে সাংবাদিকদের কাছে দিবেন।

নাঙ্গলকোটে টিয়ার কাবিখা-সহ সরকারি কোন কাজে দুর্নীতি এখন থেকে আর করতে দেয়া হবে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আগামী উপজেলা নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেয়া হবে, উপজেলা নির্বাচনে প্রত্যেক কেন্দ্রে মিডিয়ার ক্যামেরা থাকবে, কাউকে ভোট কারচুপি করতে দেয়া হবে না। যারা নাঙ্গলকোটের মানুষ হয়ে এদিক সেদিক হাটাহাটি করে আগামী উপজেলা নির্বাচনের ভোটের মাধ্যমে এসব দুর্নীতিবাজদের প্রতিহত করা হবে।

এখন থেকে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিবো, কাউকে এসব নির্বাচনে বানিজ্য করতে দিবো না, বানিজ্যকারীদের বিরুদ্ধে আপনারা সকলে জিহাদ ঘোষণা করবেন।

এসময় তিনি নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কোন অনিয়মকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিবেননা, যদি দেন আমার মিডিয়ার সহকর্মীদের নিয়ে প্রতিহত করবো। নাঙ্গলকোটের প্রয়াত সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া শিখিয়ে গেছেন কোন অনিয়মে জড়ানো যাবে না। জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার হাত ধরেই নাঙ্গলকোট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সেই নাঙ্গলকোট কোন দুর্নীতিবাজদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে না।

স্মরণসভায় নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন নাঙ্গলকোট উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক আবু।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছিরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নাঙ্গলকোট উপজেলা আ’লীগ সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ নুর উল্লাহ মজুমদার, মফিজুর রহমান হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলম পাটোয়ারী, হেসাখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার, পেরিয়া ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদার, বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, উপজেলা আ’লীগ সহ-প্রচার সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবুল হাশেম,  উপজেলা যুবলীগ নেতা জহির উল্লাহ মজুমদার সুমন, কৃষক লীগ সধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ মেম্বার,  ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হক,  রহমত উল্লাহ রাহাত সহ বিভিন্ন নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ ।

একই দিন সকালে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের গণমানুষের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা,  সাবেক সফল সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার ১৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তার নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম ও কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করা হয়। 

জানাযায়,মরহুম জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া ১৯৪৮ সালে নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ।তাঁর পিতার নাম মরহুম আনু মিয়া ভূঁইয়া, মাতার নাম মরহুমা উম্মে কুলসুম। পাঁচ ভাই, চার বোন।ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। 

জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া  ময়ুরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ফেনী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক (ডিগ্রী) লাভ করেন। তিনি কলেজে অধ্যয়নকালীন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ও বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম মোহছেনা আবেদীন ফেন্সী। একমাত্র আদরের মেয়ের নাম রওশন আরা আবেদীন স্নিগ্ধা। মেয়ে জামাতা জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার ভাতিজা নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাছির, বর্তমানে ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনিও শ্বশুরের পথ ধরে জনসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার স্মৃতি আজীবন ধরে রাখতে নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাছির প্রতিষ্ঠা করেছেন জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন।

জনসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি হয়েছেন ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের একাধারে ৩ বারের জননন্দীত চেয়ারম্যান।  পরে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।দলমত নির্বিশেষে তিনি ছিলেন সবার কাছে পরম প্রিয়।এ মহান ও জননন্দীত নেতা  ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায়  নিয়ে না ফেরার দেশে  চলে যান। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023