|
Date: 2024-01-31 09:49:45 |
টেকনাফে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈল ফসলের আবাদ কর্মসূচীর আওতায় সূর্যমুখী ও সরিষা চাষ পরিদর্শন করেছেন ঢাকা থেকে আগত প্রতিনিধি দল। স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ দেখে এই প্রকল্পের কর্মকান্ড আরো সম্প্রসারণ করার আশ^াস।
৩০জানুয়ারী বিকাল ৪টারদিকে টেকনাফ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি টিম রাজস্ব অর্থায়নে স্থাপিত ৫টি সূর্যমূখীর প্রদর্শনী পাইলট প্রকল্পের আওতাধীন সদর ইউপির দক্ষিণ লম্বরীর মরহুম আব্দুল জলিল চৌধুরীর পুত্র মোহাম্মদ কলিমের প্রায় ৪০শতকের সূর্যমুখী ও সরিষা চাষ পরিদর্শন করেন। এসময় ঢাকা খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং অতিরিক্ত পরিচালক ডঃ হযরত আলী, মনিটরিং ও বাস্তবায়ন অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন ও টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাকিরুল ইসলামসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এসব সূর্যমুখী ফুলের বাগানে অসংখ্য সুর্যমুখী ফুলের সমাহার ; যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। শীতের হিম বাতাসের দোল খেয়ে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তার সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য। আর সূর্যমুখীর সোনালী রূপ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত হতে প্রকৃতি প্রেমিরা দলে দলে দেখতে আসছেন । কেউ বন্ধু অথবা পরিবারের সঙ্গে সূর্যমুখীর ফুল বাগানে ঘুরছেন। আবার কেউ কেউ স্মৃতি ধরে রাখতে এই মোহনীয় মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করছেন।
দক্ষিণ লম্বরীর উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কলিম জানান,এই বছর বারি সরিষা-১৪ এবং সূর্যমুখীর প্রদর্শনী করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে সব কিছু করেছি তাই অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আমি পরবর্তী মৌসুমে বীজ হিসেবে বিক্রি করার জন্য এ সরিষা সংরক্ষণ করবো। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ বিক্রি করতে প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতিও পেয়েছি। এখানে আশপাশের অনেক কৃষকেরা পরবর্তী মৌসুমে সরিষা আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি তাদেরকে বীজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আগামীতে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে আরো বড় পরিসরে চাষাবাদ করার ইচ্ছে আছে।
মহেশখালীয়া পাড়ার কৃষক আবুল ফয়েজ এবার সূর্যমুখীর প্রদর্শনী করেছেন। রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ খুবই কম। তাই আমার আশপাশের অনেক কৃষকও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ পোষণ করছে। অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম এবং অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। আর যারা আমার ফুল দেখতে আসছেন,তাদের অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমি আশা করি ফলন অনেক ভালো হবে। আগামিতেও সূর্যমূখী চাষাবাদ করবো।
টিমের সদস্যরা স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানান,এসব প্রদর্শনী দেখে এলাকার কৃষকদের মধ্যে সূর্যমুখী ও সরিষা চাষে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন।
মাঠ পরিদর্শনকারী টেকনাফ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শফিউল আলম জানান, জমি পতিত না রেখে স্বল্পমেয়াদি তৈল ফসল চাষ করে জমি ব্যবহারের পাশাপাশি নিজের তৈলের চাহিদা পুরণ করা যাবে।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাকিরুল ইসলাম জানান,এই অঞ্চলের আবহাওয়া সরিষা ও সূর্যমুখী আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। এসব ফসল চাষ করে যেমন পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব তেমনিভাবে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতাও কমানো সম্ভব। সেই সাথে এসব তৈল খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। উচ্চ ফলনশীল, সেচ দেওয়া কম, কম খরছে স্বল্প সময়ে উৎপাদন এবং লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের প্রতি স্থানীয় কৃষকেরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
মূলত স্থানীয় বাজারে ভোজ্য তৈলের দাম বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় কৃষি বিভাগের ভূমিকা। আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই নিজস্ব উৎপাদনে মনোযোগী প্রতিযোগিতায় এই ইতিবাচক পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় এবার টেকনাফে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সরিষা, সূর্যমুখী ও বাদাম চাষ। এসব তৈল ফসল চাষ করে খুশি স্থানীয় কৃষকরাও। গতানুগতিক চাষের বিপরীতে তৈল ফসল চাষে এক নতুন বৈচিত্র্যতা হয়ে উঠছে লক্ষনীয়।
এই এলাকার কৃষকরা ধান চাষে চিরায়িতভাবেই আগ্রহী। আমন মৌসুমে অনেক জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকলেও বোরো মৌসুমে বিস্তীর্ণ জমি থেকে যায় অনাবাদি। ধান চাষে তুলনামূলক সেচের প্রয়োজনীয়তা বেশী হওয়ায় আমন মৌসুমে পানির প্রাকৃতিক যোগান থাকে বলে কৃষকরা সহজে এ দুই মৌসুমে ধান চাষ করতে পারেন। বোরো মৌসুমে যেসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা আছে সেখানে ধান চাষ হয়ে থাকলেও কৃত্রিম সেচের অভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা পতিত থাকে। ধানের তুলনায় সেচ নির্ভরতা কম এমন ফসল আবাদে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষিতে।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,প্রণোদনার আওতায় ১হাজার ৩০জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। বোরো বীজ সহায়তা হিসেবে ১হাজার ৫শ জন কৃষককে ২কেজি করে হাইব্রীড বোরো বীজ ও ১হাজার জনকে ৫কেজি বোরো ধান বীজ ১০ কেজি এমওপি সার ১০ কেজি ডিএপি সার সহায়তাও দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্বল্প সেচে আবাদ করা যায় সূর্যমুখী, সরিষা, গম, ভূট্টা, চিনা বাদাম ফসল বীজ বিতরণ করা হয় ৫শ ৩০জন কৃষকের মাঝে।
তৈল ফসলের আবাদ বাড়াতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬জন অগ্রসরমান কৃষককে বীজ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে আরো ১০টি সরিষা প্রদর্শনী দেওয়া হয়। পরবর্তী মৌসুমে যাতে আগ্রহী কৃষকেরা সহজে উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো পায় সে উদ্দেশ্যে তাদেরকে বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। এছাড়া উদ্ধ্যুদ্বকরণের মাধ্যমেও অনেক কৃষক চাষ করেছেন সরিষা ও সূর্যমুখী। কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণ প্রাণশক্তি থাকায় মানুষের শরীরের দুর্বলতা কমাতে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। যেকোনো তৈলের চাইতে এর তৈল ‘১০গুণ’ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ তাই সূর্যমুখী চাষ বাড়ার এটাও একটা কারণ।
© Deshchitro 2024