|
Date: 2022-10-17 15:35:21 |
কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, প্রবাসীদের অসহায় আত্মসমর্পণের শুরুর প্রক্রিয়া। এই অফিস অদম্য দূর্নীতির চিহ্ন নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। প্রবাসীদের রক্তচোষা অর্থের স্মারক হয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে রয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার প্রাণ কেন্দ্র। অথচ পাসপোর্ট অফিসের ভেতর সত্য প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই।
পাসপোর্ট অফিসে দূর্নীতির মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে পাসপোর্ট অফিস দূর্নীতির আঁকড়ায় পরিণত হয়েছে। রীতিমতও প্রকাশ্যেই দূর্নীতির মহোৎসব চলছে। দূর্নীতির সিস্টেমটা এখানে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের প্রয়োগ যেন অভিসম্ভাবী বস্তু। বিচার সেখানে কল্পনা মাত্র। প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ সবই যেন অহেতুক।
পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন রাস্তার বেশিরভাগ দোকান মালিকরাই দালাল পেশার সাথে জড়িত। প্রথমবার পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিবিশেষই তাঁদের প্রধান টার্গেট। পাসপোর্ট করার নিয়ম না জানার অজ্ঞতা এর বড় একটি কারণ। এই অজ্ঞতার সুযোগে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে অসহায় নিবৃত্তদের কষ্টে উপার্জিত অর্থ। এতে সহযোগিতা করছেন কিছু সংখ্যক পাসপোর্ট কর্মচারী। প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ এখানে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
দালাল কর্তৃক পাসপোর্ট,
প্রথমত,সরকারি নিয়ম অনুসারে,৪৮ পৃষ্টা দশ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে টাকা লাগে ৫,৭৫০ টাকা,৬৪ পৃষ্ঠা দশ বছর মেয়াদী ৮০৫০ টাকা। সেখানে একজন দালাল কর্তৃক পাসপোর্ট করানো হলে তাঁকে দিতে হয় ৪৮ পৃষ্ঠা দশ বছর মেয়াদীর জন্য ৯০০০-১০০০০ টাকা এবং ৬৪ পৃষ্ঠার দশ বছর মেয়াদীর জন্য ১১০০০-১২০০০ হাজার টাকা।
দ্বিতীয়ত, দালাল চক্রের মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন করলে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। বিশাল লাইনে দাঁড়াতে হয় না। দুর্ভোগের কথা এখানেই আসবেই না। পাসপোর্ট আবেদন জমা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবেদন গ্রহণ যোগ্যতা পায়। পাসপোর্ট আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতীত অন্য কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না।
তৃতীয়ত,পুলিশ ভেরিফিকশনের প্রয়োজন হয় না। তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাসপোর্ট আবেদনের যাচাই-বাছাই হয় না। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন খুদ পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ। তাঁদের সাথে দালাল চক্রের আঁতাত রাত্রি নিশিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এবার আসি দালাল না ধরে পাসপোর্ট করার খেসারতে,বলা যায় সরকারি নিয়ম মানার খেসারত;
পাসপোর্ট আবেদনগ্রহণকারীর পক্ষ থেকে অহরহ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। চুন থেকে পান কঁষলেই আবেদন রিজেক্ট করে দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় কাগজ প্রদর্শন করতে হয়। না করলে আবেদন ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। সবার প্রথমে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরও দালাল চক্রের কাজ আগে সম্পন্ন হয়। কাজের দীর্ঘসূত্রতা প্রত্যক্ষ হয়। পুলিশ তদন্তে পাসপোর্টকারীর বেগ পোহাতে হয়। সাথে বাঁ হাতের ব্যপারটা সামাল দিতে হয়। সর্বশেষ, পাসপোর্ট ২১ কার্য দিবসে হাতে আসার কথা থাকলেও দীর্ঘ দু-তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। যেই দুর্ভোগের অন্ত নেই।
দালাম বনাম সরকারি নিয়ম। কে এখানে বেশি শক্তিশালী?
প্রশ্ন থেকে যায়। এই যে,দোষ-ত্রুটি কুবৃত্তি চর্চা। লুটরাজের রাজত্ব। চলছে—ত চলছেই। এর ফল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য সুখকর নই।
প্রত্যক্ষদর্শী হিশেবে এর প্রতিকারের রাস্তা দেখি না। যার কারণে সচরাচর এই নিয়ে কেউ কথা বলে না।
মূসা বলছিলাম,কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট থেকে।
© Deshchitro 2024