ধর্মমন্ত্রী ও জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলালসহ তাঁর বাবাকে 'দলবাজ' এবং 'রাজাকার' আখ্যা দিয়ে সংরক্ষিত আসনের এক নারী সংসদ সদস্যের পুত্র সামাজিক যোগাযোগ মধ্য ফেসবুকে একটি লেখা পোষ্ট করেছেন। এছাড়া একই পোষ্টে চট্টগ্রাম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত দিলোয়ারা ইউসুফকেও 'রাজাকার' তকমায় অভিহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। ফেসবুকে পোষ্টকারীর নাম মীর শরীফ হাসান লেলিন। তিনি জাতীয় সংসদের জামালপুর-শেরপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য হোসনে আরার ছেলে এবং আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও আওকণ্ঠশিল্পী।

 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মীর শরীফ 

হাসান লেলিন অনেক আগে থেকেই সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলালসহ তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানাবিধ অশালীন মন্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে আসছে।


তবে মীর শরীফ হাসান লেলিনের দাবি, তিনি কখনোই কারোর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে দেননি। যেটা সত্য, তিনি সেটাই প্রকাশ করেন।'



রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মমন্ত্রীকে ঘিরে বিস্ফোরণ মন্তব্যে পোষ্ট করেন 'শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষক, এ কথা জানে বিশ্বের লোক' গানের কণ্ঠশিল্পী মীর শরিফ হাসান লেলিন।


এরপর থেকে ওই খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। নজরে আসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরও। তাঁরা ধর্মমন্ত্রীকে নিয়ে বেমানান মন্তব্য করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 


মীর শরিফ হাসান লেলিন তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোষ্টের লেখাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো, 


প্রসঙ্গ নারী আসন...

মহিলা এমপি হিসেবে নাম আসা,

দিলোয়ারা ইউসুফ এর বাবা, চাচা যদি চিহ্নিত রাজাকার হয়ে থাকেন, দিলোয়ারা ইউসুফ কিন্তু ৯৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের জন্য অবদান রাখছেন!

পক্ষান্তরে দলবাজ ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল নিজে রাজাকার। তার বাবা হবিবর রহমান খান কুখ্যাত রাজাকার হলেও তাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দেখার কিন্তু কেউ নাই!

২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করা আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেদ মোশাররফকে নিজের হাতে পরাজিত করার রেকর্ডটিও কিন্তু তার হাতেই রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত চেয়ারম্যান হত্যা মামলার এক নাম্বার আসামি হয়েও উল্টো ধর্ম প্রতিমন্ত্রী থেকে উনি কিন্তু এখন ধর্মমন্ত্রী হয়েছেন !!

তার পুত্র সন্তান মিতুল অর্থাৎ তার বাড়ির কাজের মেয়ের ছেলে চেহারা মিলে যাওয়ার কারণে হলফনামায় পরিবর্তন এনে স্বীকৃতি দেয়ার কথা না হয় বাদই দিলাম।

সেদিন আবার দেখলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেই ছেলের ছবি তুলে স্বীকৃতির মাত্রাটা আর একটু বাড়িয়ে নিলেন!

ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এতবড় আওয়ামী লীগার যে, কি না, ২০০৮ সালে আমার কাছে এসে বসে থাকতো, আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সাথে পরিচয় করে দেওয়ার জন্য।  

আমরা প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মুখ খুললে যত অপরাধ শুধু আমাদেরই.. 

সেলুকাস!!


ফেসবুকে পোষ্টকারী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরীফ হাসান লেলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফেসবুক মেসেঞ্জারে বলেন, 'ভাই, আপনারা তো সত্য লিখবেন না। সাহস থাকলে, এবার লেখেন। ধর্মমন্ত্রীসহ তাঁর পরিবারকে নিয়ে আমি ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছি। পোষ্টের সবগুলো তথ্যই সঠিক। আমি কারো বিরুদ্ধে  কোনো অপবাদ ছড়াচ্ছি না। বরং যেটা সত্য, সেটাই পোষ্ট করেছি। এটা দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না। কারণ, সত্য উন্মোচন করা দরকার। সেকারণেই ফেসবুকে পোষ্ট করেছি।'


এবিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, 'ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল মহোদয়সহ তাঁর বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে বেমানান পোষ্ট দেওয়ায় আমরা হতবাক হয়েছি। কারণ, মাননীয় ধর্মমন্ত্রী সম্ভান্ত্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি টানা চারবারের সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনি সরকারের গত মেয়াদে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। চলতি সংসদে তিনি ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এরকম জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিকে নিয়ে ফেসবুকে অপবাদ ছড়ানো প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আমরা বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। '


 ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, 'ধর্মমন্ত্রীসহ তাঁর পরিবারাকে নিয়ে 

মীর শরিফ হাসান লেলিন এবারই যে প্রথম বিরূপ মন্তব্য ফেসবুকে পোষ্ট করেছে, তা কিন্তু নয়। বরং এর আগেও মাননীয় ধর্মমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে নানা অপবাদ ছড়াচ্ছিলো সে। যা একান্তই নিন্দনীয় কাজ। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'



ধর্মমন্ত্রী ও জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলালের সঙ্গে মোবাইল ফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি কল রিসিভ না করায় তাঁর কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023