সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সৎ খালা ও তাঁর দুই ছেলেকে হত্যার দায়ে ভাগনে আইয়ুব আলী সাগরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আইয়ুব আলী সাগর জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের মৃত মকছেদ মোল্লার ছেলে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ভিকটিম রওশনারা তাঁর দুই শিশুপুত্রসহ বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। স্বামী সুলতান আলী তাঁর খোঁজ নিতেন না। রওশনারা তাঁত ফ্যাক্টরিতে সুতার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর সৎ ভাগনে আসামি আইয়ুব আলী ঋণগ্রস্ত ছিলেন। ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রওশনারার বাড়িতে এসে তাঁর ব্যবহৃত ট্রাংক ও জিনিসপত্র দেখে ধারণা করেন ট্রাংকের মধ্যে অনেক টাকা আছে। 

আইয়ুব আলী টাকা চুরির পরিকল্পনা করেন এবং ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে রওশনারার বাড়িতে মেহমান হয়ে আসেন। রাতে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়েন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গভীর রাতে উঠে ট্রাংকের তালা খুলে টাকা বের করার চেষ্টা করেন। এই শব্দে রওশনারার ঘুম ভেঙে যায়। আসামি আইয়ুব আলী মসলা বাঁটার শিল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে রওশনারা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন আইয়ুব। 

রওশনারার তিন বছর বয়সি ছেলে মাহিন জেগে উঠে কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও গলা টিপে হত্যা করেন আইয়ুব আলী সাগর। এ সময় রওশনারার অপর ছেলে জিহাদের ঘুম ভেঙে গেলে আসামি আইয়ুব আলী তাকেও গলা টিপে হত্যা করেন। মরদেহগুলো ঘরের মধ্যে ফেলে রেখে দরজা বাইরে থেকে শিকল দিয়ে আটকে চলে যান। 

রওশনারা পরপর দুই দিন কাজে না যাওয়ায় তাঁত ফ্যাক্টরির মালিক কুদ্দুস খোঁজ নিতে থাকেন। রওশনারার বোন লিলি খাতুনকে বিষয়টি বললে তিনি ওই ঘরের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে দেখেন রওশনারা ও তার দুই ছেলের মৃতদেহ ঘরের মেঝেতে অর্ধগলিত অবস্থায় পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।  এ ঘটনায় রওশনারার ভাই নুরজ্জামান বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আইয়ুব আলী সাগরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। 

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুর রহমান বলেন, হত্যার দায় স্বীকার করে আইয়ুব আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণের জন্য মোট ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তারপর আজ রোববার মামলার একমাত্র আসামি আইয়ুব আলী সাগরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024