জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। 

অনুষ্ঠিত ওই কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল।




রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত


উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়নস্থ ডিগ্রীরচর উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিদ্যালয়টির মাঠে চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশের অনুষ্ঠান করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী।



চরগেয়ালীনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওই কর্মী সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরভক্ত দুদু মোল্লা। এতে বিশেষ অতিথি করা হয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামসহ ৫ জনকে।



স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৪টার দিকে কর্মী সমাবেশের অনুষ্ঠানটির মূল কার্যক্রম শুরু করা হলেও মূলত সকাল থেকেই সমাবেশ সফল করতে উচ্চ শব্দে মাইকিং করায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখে স্কুল কর্তৃপক্ষ। 


উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালকে স্বাগত জানানোর জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিকেল ৪ টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঠের প্রবেশ পথের দুই পাশে দাঁড় করানো হয়। পরে সেখানে ধর্মমন্ত্রীকে স্বাগত জানায় শিক্ষার্থীরা।    



শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া, হেলাল, পারভী, সীমা আক্তার  জানায়, শবে বরাতের জন্য রোববার ৫টি থেকে ৬টি ক্লাস করার কথা ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের সমাবেশের কারণে একটি ক্লাস করিয়েই পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বেশ কিছুক্ষণ।'



শিক্ষার্থী অভিভাবক আবু বাক্কর, নাজমা বেগম, আলাল উদ্দিন, রুস্তম আলীসহ অনেকেই বলেন- 'আমাদের সন্তানদের রাজনীতি করার জন্য স্কুলে পাঠায় না। আমরা সন্তানদের লেখাপড়া করার জন্য স্কুলে পাঠায়। তাহলে কেনো ক্লাস বন্ধ রেখে বিদ্যালয় মাঠে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করা হলো। আবার আমাদের সন্তানদের দাঁড় করিয়ে রাখা হলো মন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য। তাদের যা ইচ্ছা তারা তাই করলো। মনে হচ্ছে, দেশে কোনো নিয়ম নেই, কোনো আইন নেই।'



ডিগ্রীরচর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, 'পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়নি। বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশ করায় পাঠদানে কোনো ক্ষতিও হয়নি। তবে বিদ্যালয় চলাকালে সমাবেশের আয়োজন করায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এটা তেমন কিছু না।'



চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরভক্ত দুদু মোল্লা বলেন, 'পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে কি না, সেটা আমার জানা নেই। তবে আমাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।'



কর্মী সমাবেশের অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল হালিম মোবাইল ফোনে বলেন, 'সমাবেশের মাইকিং শুরু হয়েছে অনেক পরে। আর মন্ত্রী সাহেব এসেছে বিকেল ৪টার দিকে। এতে স্কুলের ক্লাসের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। আর একজন মন্ত্রীকে স্কুলে এনে এলাকা উন্নয়নের দাবির কথা বলা হয়েছে। সেকারণেই   বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সামাবেশ করা হয়েছে।'



উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, 'আমি ছুটিতে আছি। সমাবেশের জন্য পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।'



এসব বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন- ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। কে কীভাবে অনুষ্ঠানটি করলো তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023