মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:  

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় সুর্যমুখি চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। স্বল্প সময়ের তেলজাতীয় ফসল সুর্যমুখি উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হতে পারে। আর এ লক্ষে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চলে জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি বিভাগ। এই প্রকল্পের অধিনে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে সুর্যমুখি বীজ ও সার।


সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ওলিউর রহমান জানান, চলতি রবি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে হাইসান জাতের সুর্যমুখি চাষ করেছেন। ক্ষেতের অধিকাংশ গাছেই ফুল খুবই বড় বড় হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে সুর্যমুখি ভাঙ্গতে পারবে বলে জানান। এর আগে প্রণোদনা হিসেবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনা মুল্যে বীজ ও সার সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে একই পরিমান জমিতে সুর্যমুখি চাষ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয় তার। তিনি বলেন, আগামীতে প্রণোদনার পাশাপাশি নিজে আরো বেশি পরিমান জমিতে সুর্যমুখি চাষ করবেন। পাশ্ববর্তী লাবসা এলাকার শহিদুল ইসলাম জানান, পরিক্ষামুলক ভাবে দেড় বিঘা পরিমান জমিতে সুর্যমুখি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গাছে সুর্যমুখি ফুলের যে ধরন দেখা যাচ্ছে তাতে ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হতে পারে বলে ধারনা করছেন।


সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ১৩৮ হেক্টর জমিতে সুর্যমুখি চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১২ হেক্টর , কলারোয়ায় ৪৫ হেক্টর, তালায় ২০ হেক্টর, দেবহাটায় ১১ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৬ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৭ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হেক্টর। তবে গেল বছর জেলায় এ ফসলটি চাষ হয়েছিলো ১৪৯ হেক্টর জমিতে।


অন্যদিকে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চলে জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের অধিনে জেলায় ১ হাজার ৫০জন প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সুর্যমুখি বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। জনপ্রতি কৃষক এক বিঘা পরিমান জমিতে সুর্যমুখি চাষ করতে পারবে।


বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) সাতক্ষীরা বিনেরপোতাস্থ কার্যলয়ের দায়িত্বরত উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শিমুল মন্ডল জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সুর্যমুখি খুবই লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি ফসল। কারণ এটি মাটির লবণাক্তা সহ্য করতে পারে। বারি বা হাইসান জাতের সুর্যমুখি চাষ করে সাতক্ষীরা অঞ্চলের কৃষক লাভবান হতে পারে। লবণাক্ত এলাকাতে সুর্যমুখি হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন সুর্যমুখি ফুল বড় হলে টিয়া পাখির উৎপাত বেড়ে যায়। কিন্তু নেট দিয়ে চাষ করতে পারলে পাখির উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া সুর্যমুখি ভাঙ্গানো বা তেল তৈরীতেও কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতা রয়েছে। সুর্যমুখি থেকে বিশুদ্ধ তেল উৎপাদন করতে যে প্রযুক্তির দরকার তা সাতক্ষীরায় নেই। যে কারণে কৃষকরা ফল ভেঙ্গেই বিক্রি করে দেয়। এতে তাদের লাভের পরিমানটা কমে যায়।


সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, সুর্যমুখি চাষে ব্যাপক সম্ভবনা সাতক্ষীরা জেলা। স্বল্প সময়ে বেশি লাভজনক ফসল এটি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে তেলজাতীয় ফসল সুর্যমুখি উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উপকুলীয় এলাকার পতিত জমিতে এটি চাষ করে লাভবান হতে পারবে কষৃক। তাছাড়া আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024