|
Date: 2024-03-06 20:37:55 |
মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
স্বল্প শিক্ষা আর পরিবারের কর্তাবিয়োগ হওয়ার কারণে সন্তান ও পরিবার নিয়ে কঠিন মানবেতর জীবন যাপন করছে কত নারী। প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থায় কর্মজীবনে নারীরা এগিয়ে গেলেও প্রত্যন্ত এলাকার নারীরা এখনও পিছিয়ে।
মাহফুজা খাতুন গাবুরার ৯নং সোরা গ্রামের খোলপেটুয়া নদী চরের একজন বাসিন্দা। স্বামী পরিত্যক্তা নারী মাহফুজা একমাত্র নাতীকে নিয়ে থাকে ঝুুঁপড়ি ঘরে। পিতা মৃত আনছার শেখ। ২ ছেলে ১ মেয়ে সবাই একে একে তাকে ফেলে চলে গেছে পরিবার নিয়ে। এখন আর তারা তার খবর নেয় না। একসময় নদী ও সুন্দরবনে মাছ ধরেও সন্তানদের নিয়ে স্বর্গসুখে ছিল এই কুঠিরে।
শিশু কালে কখনো স্কুলে পড়তে পারিনি ৪৫ বছর বয়সী মাহফুজা। নামতা বইয়ের গণিতের হিসাব বোঝেনা ঠিকই কিন্তু গাঙে জাল টেনে ধরা রেণু গণনায় বড্ড পাঁকা তিনি। কঠিন দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এই খোলপেটুয়ার চরে কাটছে তার শৈশব, কৈশরসহ বাকী জীবন। উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা দু’মুঠো খেয়ে বাঁচতে চায় মাহফুজার মতো নারীরা। কিন্তু বন্ধ রেণু ধরা, নেই জনমুজুরী কি করবে সেটাই ছিল ভাবনার।
হঠাৎ আরও কঠিন দূর্বিপাকে পড়তে হয় তার। বাল্যকাল থেকে যে মাটিটুকু আটকিয়ে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সাথে লড়াই করে বেঁচে ছিলো আজ সেটাও ছাড়তে হবে। গাবুরায় হবে টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু মাহফুজারা যাবে কোথায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গাবুরা ছেড়ে যেতে হবে তার। উন্নত হবে ইউনিয়ন কিন্তু মাহফুজাদের ঠাঁই নেই এক বিন্দু, সেই মডেল গাবুরায়। পরিবারের নেই তিলঠাই জমিজমা।
তবে কি উপায় হবে এরকম পরিবারগুলোর। ঘরে চাল নেই রান্না হয় না সব দিন। ৬ই মার্চ সকালে কথা হয় মাহফুজার সাথে। খোলা আকাশের নিচে চুলা জ্বালাতে জ্বালাতে নিজের কষ্টের কথাগুলো নিজেই বলছিলেন এই জীবন যুদ্ধে টিকে থাকা নারী।
মাফুজার মতো ভূমিহীন অনেক পরিবারের ছাড়তে হচ্ছে নিজের জন্মভূমি। গৃহহীন হতে হচ্ছে এসমস্ত নিরীহ পরিবারের।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, বুধবার দুপুরের রোদে পুড়ে যাচ্ছে তাদের মলিন মুখ, তার পরেও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের কাজে দুপুরে রান্না করা হলোনা তাদের।
আট বছর বয়সী মেয়ে রমিছার কাছে দুপুরে খাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে রমিছা কাঁদ কাঁদ হয়ে বলে দুপুর হয়ে গেছে, তবুও মা ভাত রান্না করতে যায়নি, আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে, ঘরে নেই কোন খাবার, রমিছার মুখ টি খুবই মলিন হয়ে আছে, এমনভাবে দিন কাটছে হাজার ও গাবুরার অসহায় পরিবারের।
© Deshchitro 2024