ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এর সর্বশেষ অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।


জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। সেখানে নোঙর করেছে জলদস্যুরা।


১৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থানের এ তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।


সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জানান, জাহাজটি স্থলভাগ থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে উপকূলে এনে আবার নোঙর করা হয়েছে। দস্যুরা এখন পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করেনি। সমুদ্রগামী জাহাজের অবস্থান পর্যবেক্ষণকারী ‘শিপফিক্স’-এর ওয়েবসাইটেও দেখা যায়, সোমালিয়ার উপকূলের কাছে অবস্থান করছে জাহাজটি।


এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) থেকে তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল যে জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে গ্যারাকাদ সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করা হয়েছে ।


এদিকে এমভি আবদুল্লাহর মালিকানাধীন সংস্থা কেএসআরএম গ্রুপের গণমাধ্যম বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুল ইসলামও গারাকাদ বন্দরে জাহাজটি নোঙরের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত পর্যন্ত আমাদের নাবিকদের সঙ্গে যা কথা হয়েছে, আমরা তাদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা নিরাপদ আছেন, সুস্থ আছেন। তবে জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ আমাদের এখনও স্থাপন হয়নি। আমরা আশা করছি জলদস্যুরা যেহেতু সেফ জোনে পৌঁছে গেছে, অচিরেই তারা হয়তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমরাও বিভিন্ন থার্ড পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে আমাদের যেসব নাবিক জিম্মি অবস্থায় আছেন, তাদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের তরফ থেকে যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা সেগুলো নিয়েছি।’


বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, সোমালিয়ার জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ এবং জাহাজে থাকা নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো টাকা দাবি করেনি।


তিনি বলেন, ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের বিষয়টি গণমাধ্যমের সৃষ্টি। আমরা এখনো জানি না তাদের কী দাবি-দাওয়া। এসময় তিনি ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে গণমাধ্যমগুলোকে বিরত থাকতেও অনুরোধ করেন।


খুরশিদ আলম বলেন, এ পথে চলতে গিয়ে গত ২৪ বছরে ৩০০ থেকে ৪০০ জাহাজ অপহৃত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনা গেছে। আমরা আগের প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।


তিনি বলেন, জাহাজের বিমাকারী সংস্থা এবং সোমালিয়ায় দস্যুদের বিষয়ে জানানোর সংস্থা ‘সোমালিয়ান পাইরেটস রিপোর্টিং’ গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। এছাড়াও বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।


ছিনতাইকৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ কে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ। জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার করতে কয়েক দফায় জলদস্যু ও নৌবাহিনীর (নেভি) সদস্যদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিককে একে একে হত্যার হুমকিও দেয় জলদস্যুরা। এরপর কোনো উপায় না থাকায় পিছু হটে নেভির যুদ্ধজাহাজটি।


সোমালিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ মার্চ) রাত থেকে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজটি তাদের অনুসরণ করে। কিন্তু দুর্ধষ জলদস্যুদের অনড় এবং অনমনীয় অবস্থানের কারণে জিম্মি থাকা ২৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবুও মাত্র ২০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমবি আব্দুল্লাহ’কে অনুসরণ করে যায় নেভির জাহাজটি।


বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।


এর আগে মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সও জানিয়েছে যে, তাদের একটি রণতরী উপকূলে বাংলাদেশি ওই জাহাজটিকে অনুসরণ করছে। জাহজটিতে ২৩ ক্রু সদস্য জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024