ও আমার বাংলা মা তোর-আকুল করা রূপের সুধায় হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে। প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ ৷ যার মধ্যে ঋতুরাজ বসন্ত। যা অজস্র সুভাষিত ফুল ও ফলের ঋতু হিসেবে  সকলের কাছে অতি পরিচিত । যারই ফলশ্রুতিতে চলতি বসন্ত বাতাসে দুলছে মানব জাতির কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি সজিনা ও ফুল ছড়াচ্ছে সুঘ্রাণ। বর্তমানে আম মুকুলের সাথে সফর সঙ্গী হিসেবে গাছে গাছে দৃষ্টি নন্দন সজিনা-ফুল যেন প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইতিমধ্যেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে ছোট সাইজের কচি সজিনা।  যা অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। তবুও মাটি বক্ষে  কচি দূর্বা ঘাস আর ঝরে পড়া সজিনা ফুল যেন আবহমান এই সোনার বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য সকলকে মনে করিয়ে দেয় প্রিয় শ্যামল বাংলার প্রকৃতিতে ফাল্গুনের মাঝা মাঝিতে গাছে গাছে দুলছে নান্দনিক সজিনা ও ফুলের মনমুগ্ধকর দৃশ্য। বসন্তে এই সময় প্রকৃতিতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ছোঁয়া এবং সৌন্দর্যের বিকিরন। তার মধ্যে কেবলই সৌন্দর্যের এই ফুল ঝরে যায় সময়ের আবহে যেটা বর্তমানে পরিলক্ষিত। সকল ফুল ফলের মধ্যে সবজির উৎস্য আর ঔষধীগুনের পরিপূর্ণতায় সম্ভব। এমনই এক ফুল সজিনার ফুল। অত্যন্ত ঔষধী গুন সমৃদ্ধ এই ফুল নানান ধরনের রোগ এর মহাষৌধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ হতে যুগান্তর।বর্তমান সময়ে সজিনা গাছগুলো সেঁজেছে ছোট ছোট সাদা  ফুলে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় সজিনা ডাটা যেমন ঔষধী সব্জি হিসেবে বিশেষ ভাবে পরিচিত। তেমনি  সজিনা ফুল ও পাতা অতি উপকারী ঔষধী খাদ্য হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। এই ফৃুলে ভিটামিন এ,বি,সি আছে যা ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়ামের মত খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ। ফুলের পাশপাশি এর পাতা অত্যাধুনিক ঔষধী গুনাগুনের অধিকারী। নিয়মিত এই পাতা খেলে হার্ট ভাল থাকা সহ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে অতি কার্যকর। একই সাথে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সজিনা পাতার বিকল্প নেই। এছাড়া  ক্ষতিকর কোলেস্টরল কমায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এই পতার গুনের শেষ নেই।  পাতার ভর্তা এবং এই পাতা রান্নাকরে ও খাওয়া হয় এবং সবজির ঘাটতি পূরণ  করে। এক কথায় সজনে গাছ অতি উপকারী বৃক্ষ এর ফুল,পাতা, সজনে সবই ঔষধী গুনে ভরপুর।যা আর কয়েক দিনের মধ্যে সজনে ডাটা বাজারে উঠতে শুরু করবে। সজেন ডাটা সবজি হিসেবে যেমন চমৎকার অনুরুপ মানবদেহের জন্য অতি উপকারী। কেবল সুস্বাদু সবজি নয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সজনে সবজির তুলনা হয় না।সজনে ফুল ও পাতার ন্যায় এবং অনেকটা একই ধরনের গুনাগুন। সজনে ডাটার সবজি ঠান্ডা জ্বর এবং কাশি উপশম করে। এতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকায় এটি এন্টি অক্সিজেন হিসেবে কাজ করে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি মানব দেহের,কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে। মানুষের শরীরের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সজিনা ডাটার তুলনা নেই। পেটব্যথা, বদহজম-গ্যাস হলে সজনে ডাটার সব্জি তাৎক্ষনিক ভাবে কাজ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশার আলো সজিনা ডাটা। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বাস্তবতায়  বসত বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বানিজ্যিক ভাবে সজিনা চাষ হচ্ছে। অত্যন্ত নরম প্রকৃতির এই গাছের গুড়ি ও ডাল। প্রতি বছরই ডালকাটা হয় এবং নতুন ডালে জন্ম নেওয়া ফুল হতে সজনে সংগ্রহ করা হয়।সজনে গাছের ডাল রোপন করলে প্রাকৃতিক ভাবে ডালের যে অংশ মাটির তলায় রাখা হয় সে স্থান হতে শেকড় গজায়। কয়েকদিনের মধ্যে ডালের উপরের অংশে পাতা তৈরী হয় বা গজায়। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকাতে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত সজনে জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য এলাকার চাহিদা পুরন করে আসছে।বাজারে নতুন আসলে সজনে ডাটা অবশ্য সব ধরনের ক্রেতাদের পরখ করার সুযোগ হয় না। কারন মূল্য অনেক বেশী থাকে। বর্তমানে সজনে ফুল ও পাতা সংগ্রহের বিষয়টি বিশেষ ভাবে লক্ষনীয়। তবে সময়ের ব্যবধানে জমির উর্বরা শক্তি  কমে যাওয়ায় গাছে সজিনার ধরন কমে গেছে।  সবমিলিয়ে গ্রামীন এই জনপদে এ সব্জী উৎপাদন-চাষে উদ্যোগী বা বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হলে। অর্থনৈতিক উপার্জনের পাশাপাশি ঔষধী সব্জীর সংস্পর্শে জীবন যাপন সম্ভব হবে বলে স্বাস্থ্য স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের অভিমত ।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024