মাঝির ঘাট ব্রিজ নামে খ্যাত বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত কক্সবাজার-খুরুশকুল বেইলি সেতুর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। সেতুর একপাশে দেবে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে সেতুর রেলিং। সেতুর বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝরে গেছে নাট-বল্টু এবং সেতুটির বিভিন্ন অংশে পাটাতন উঠে গিয়ে ফুটো হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে এই সেতু।


প্রতিদিন ভারি মালবোঝাই বেপরোয়া পিক-আপ ব্রিজে উঠলেই কেঁপে উঠে এই সেতু। অনেকটা বাধ্য হয়ে ৮ টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লাখেরও বেশি মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলা শহরে আসা-যাওয়া করছে। স্থানীয়দের অভিমত, সেতুটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ে হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে।


জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বাঁকখালী নদীর উপর খুরুশকুল- কক্সবাজার সংযোগ সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় সড়ক ও জনপদ (সওজ)। যার দৈর্ঘ্য ২১৮ মিটার এবং প্রস্থ ৩ দশমিক ৭ মিটার। সেতুটি নির্মাণের প্রায় ২৮ বছর পার হয়েছে। ঈদগাঁও ৫ ইউনিয়ন, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী ও পিএমখালী ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজারের অধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে জেলা ও উপজেলা শহরে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর থেকে সেতুর প্রবেশ মুখে উত্তর-দক্ষিণ দুই পাশের গাইড ওয়ালগুলো ভেঙে অনেক পাটাতন ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। কিছু পাটাতন দেবে গেছে এবং কিছু পাটাতন ক্ষয়ে ভেতরের রড বেরিয়ে গেছে।




চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জসিম উদ্দিন জানান, 'দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই কিন্তু শিশুরা সেতু পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। শুধু শিশুরাই নয়, গ্রামবাসীও এই সেতু পার হয়ে জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করছেন। তিনি বলেন, সেতুর অনেক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। কয়েকটি ইউনিয়নের জন্য সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এটাই এখন স্বাভাবিক।'


খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ছিদ্দিকি বলেন, 'সেতুটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে। অসংখ্য গাড়ি যাত্রী নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। এছাড়া স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন সেতুটি পার হয়ে আসা যাওয়া করছে।'


তিনি বলেন, 'সেতুটির অনুকূলে ৮ টি ইউনিয়নের তিন লাখের বেশি মানুষ সেতুটি ব্যবহার করছে। খুরুশকুল এলাকার এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা এই বেইলি ব্রিজ। সেতুটির এখন নড়বড়ে অবস্থা। এর মেয়াদ চলে গেছে অনেক আগে। এছাড়া আজকাল এই সেতু দেশে খুব কমই আছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম এই সেতুটি ভেঙে স্থায়ীভাবে একটি ব্রিজ তৈরির দাবি জানান তিনি।'


কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জানায়, 'কক্সবাজার- খুরুশকুল সংযোগ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অনেক আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সেতুটির উপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল না করার জন্য সেতুটির সম্মুখভাগে লোহার পাটাতন দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।'


স্থানীয়দের দাবি, 'সেতুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে অবগত করা হয়েছিল। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাব্যক্তিরা পরিদর্শনে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন। শীঘ্রই সেতুটি সংস্কারে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।'


সড়ক উপ-বিভাগ ১ (সওজ) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার বলেন, 'সেতুটি ওই এলাকার মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি স্থায়ীভাবে নির্মাণে কাজ চলমান।'


জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহ আরেফীন বলেন, '১৮ টি গুরুত্বপূর্ণ বেইলি সড়ক স্থলে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর ব্রিজ ডিজাইন উইং থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব ব্রিজের মধ্যে এই সেতুটির নামও আছে।'

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024