|
Date: 2022-10-22 16:48:19 |
শনিবার (২২ অক্টোবর, ২০২২) দুপুর ১২ টায় পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া মোঃ খাইরুল আলম মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, মানব পাচার সংক্রান্তে বাদী হয়ে মোঃ আব্দুস সামাদ (৪৮), পিতা - মৃত সামছুদ্দিন প্রমানিক, সাং - সাদীপুর, থানা- দৌলতপুর জেলা কুষ্টিয়া, আসামি (১)রেজাউল করিম হিমেল, পিতা - হাবিল সর্দার, গ্রাম- দৌলতখালী, সরদারপাড়া, থানা দৌলতপুর জেলা কুষ্টিয়া (২) মোঃ শোভন হোসেন (৪০), পিতা- মোঃ ইদ্রিস আলী, গ্রাম- চাঁদপুর থানা- শৈলকূপা, জেলা- ঝিনাইদহ (বর্তমানে কম্বোডিয়া প্রবাসী) (৩) মোঃ ইদ্রিস মন্ডল (৪৭), পিতা- চৌধুরি মন্ডল, গ্রাম- চাঁদপুর থানা, শৈলকূপা, জেলা- ঝিনাইদহ সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন এর বিরুদ্ধে আসামি করে থানায় এজাহার দিলে দৌলতপুর থানার মামলা নম্বর ৩১ তারিখ ১৯/১০ /২০২২, ধারা ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৭/৮/৯/১০ রুজু করা হয়। মানব পাচারের ঘটনা সংক্রান্তে পুলিশ সুপার কুষ্টিয়ার প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ইনচার্জ মোঃ আনিসুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর, CCIU, এর নের্তৃত্বে একটি চৌকস টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান নির্ণয়-পূর্বক দেশ ও প্রবাসের সংঘবদ্ধ মানব মানব পাচারের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত চক্রের রহস্য উদঘাটন ও ২জন আসামি আটক করেন।আটকৃত আসামিরা হলেন (১)মোঃ রেজাউল করিম হিমেল (এজাহার নামীয়) এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের মধ্য হতে (২)মোহাম্মদ পারভেজ রানা (২৭), পিতা মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাং- মাদিয়া, ত্রিমোহনী পাড়া, থানা- দৌলতপুর কুষ্টিয়া দ্বয়কে Earth international Ltd, house no 04, Road no -1/A, Block - j, Baridhara, Vatara, Dhaka হতে আটক করা হয়।
সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্য গণ ১,০০০০০/- (এক লক্ষ) টাকা উচ্চ বেতনে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বাদীর কাছ থেকে নিয়ে গত ২৪/০৬/২০২২ তারিখ ভিকটিম ইশরাক শাহরিয়ার জয়কে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ক্যাসিনোতে কাজ করার কথা বলে কম্বোডিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে ভিকটিমকে উল্লেখিত কাজ না দিয়ে দেশ ও প্রবাসের লোকদের কাছ থেকে প্রতারণামূলক ভাবে অর্থ উপার্জন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভিকটিম ইশরাক শাহরিয়ার জয় সেখানে একমাস কাজ করার পর উক্ত কাজ করতে অস্বীকার করলে কম্বোডিয়ায় অবস্থানরত এজাহার নামীয় আসামি মোঃ সুমন হোসেন সহ ৩/৪জন অজ্ঞাতনামা আসামি গন ভিকটিমকে অজ্ঞাত স্থানে আটক করে ৮,০০০০০/- (আট লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি জানতে পেরে বাদী এক এজাহারের (১) আসামি রেজাউল করিম হিমেলকে অবগত করলে সে কম্বোডিয়াতে অবস্থানরত (২) আসামি মোঃ সুমন হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করে বাদীর ও তার ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেয়। তখন মামলার বাদীর ছেলে ইশরাক শাহরিয়ার জয় ভিডিও কলে আর্তনাদ করে এবং বাবাকেকে জানাই তিনদিন তাকে কিছুই খেতে দেয়নি শুধু পানি খেয়ে আছে; তাকে আসামিরা মারধর করে ও ইলেকট্রিক শক দেয়। জয় আরো বলেন, তাকে উদ্ধার করতে নতুবা সে আর বাচবে না অথবা আসামিদের চাহিত টাকা না পেলে ভিকটিম জয়কে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিবে মরমে জানায়। পরবর্তীতে বাদী তার ছেলেকে সুস্থ শরীরে দেশে ফেরৎ ও প্রাণ রক্ষার জন্য টাকা দিতে রাজি হয়।
এ প্রেক্ষিতে গত ২২/৮/২০২২ ইং তারিখ বাদী তার আত্মীয়-স্বজন দের নিকট হতে টাকা ধার - দেনা করে দৌলতপুর উপজেলা বাজার সজিব কম্পিউটার বিকাশ ঘর হতে ১নং আসামী রেজাউল করিম হিমেলের কথা মতে বাদীর ছেলের প্রাণ রক্ষার স্বার্থে উক্ত আসামীদের দেওয়া ৫টি বিকাশ নম্বরে সর্বমোট ৪,০০০০০/- (চার লক্ষ) টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২নং আসামির বাবা মোঃ ইদ্রিস আলীর ১টি নম্বরে আরো ৬০,০০০/- (ষাট হাজার) টাকা পাঠানোর কথা বললে বাদী তা পাঠিয়ে দেন। এরপর আরো ৩,০০০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা দাবি করলে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বাদীর ছেলের ব্যক্তিগত যে ২টি ফোন ছিল (১) আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স, মূল্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা, (২) One plus nord, মূল্য ৩৫,০০০ (পয়ত্রিশ হাজার) টাকা এবং নগদ ৯০,০০০(নব্বই হাজার) টাকা সহ পাসপোর্ট ভিসা কেড়ে নিয়ে ভিকটিম জয়কে বের করে দেয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অবগত হয়ে কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় থাইল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে কম্বোডিয়া থেকে আউট পাসের মাধ্যমে থাইল্যান্ড হয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।
ধৃত আসামি রেজাউল করিম হিমেল ইতিপূর্বে প্রায় ১০ বছর যাবত সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। ২০১৯ সালে সে বাংলাদেশে ফেরত এসে মানব পাচার চক্রের সাথে জড়িত হয়ে মানব পাচার কার্যক্রম শুরু করে। তার কোন রিক্রুটিং লাইসেন্স নাই। সে শুধুমাত্র ট্রাভেলিং লাইসেন্স এর মাধ্যমে বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া সহ বিভিন্ন দেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় মানব পাচার করে থাকে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মোঃ ফরহাদ হোসেন খাঁন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা বিশেষ শাখা, মোঃ আবু রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, জেলা পুলিশের অন্যান্য পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের সদস্য বৃন্দ এবং ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ প্রমুখ।
© Deshchitro 2024