ধর্ষণের লালসা থেকে আত্মরক্ষার উপায়
          মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
ইসলামে ধর্ষণ মহাপাপ ও ঘৃণ্য কাজ।ইহা একটি শয়তানের কুমন্ত্রণা। ইহার কামনাবাসনা থেকে আত্মরক্ষার প্রধান উপায় হচ্ছে নিজের দৃষ্টি অবনত রাখা। সুতরাং পথে-ঘাটে চলতে গিয়ে দৃষ্টিকে অবনত রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দৃষ্টি ভুল করে ফেললে ইসতেগফার করা এবং দৃষ্টি নামিয়ে নিতে  হবে।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে (নিষিদ্ধ জিনিস দেখা হতে) এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” [সূরা নুরঃ৩০]
যদি আকস্মিকভাবে দৃষ্টি পড়েই যায় তবে দ্বিতীয়বার যেন দৃষ্টি না ফেলে। হাদীস শরীফে এসেছে, 
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ‘সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।’ (মুসলিম ৫৩৭২)। 
হাদীস শরীফে আছে, হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে বলেন- ‘হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমার যোগ্য নয়।’ (আবু দাউদঃ২১৪৪) 
রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে যখন তাদেরকে শয়তানের কোনো দল ঘিরে ধরে তখন তারা আল্লাহর যিকির করে। সুতরাং তাদের অনুভূতি ফিরে আসে।’ (সূরা অা’রাফ ২০১) 
বেশী বেশী করে নফল ইবাদত করা, কারণ নিয়মিত ফরজ এবাদতের সাথে সাথে নফল ইবাদত করে নিজের শারীরিক কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন, 
“...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। আমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী শোনে)আমিই তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী দেখে) আমিই তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হাত দিয়ে কাজ করে) আমিই তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী চলে) সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাঁকে আশ্রয় দেই।...” [সহীহ বুখারী ৬০৫৮] 
যখনই পরনারীকে ধর্ষণের ইচ্ছা করবে তখনই এ কল্পনা করতে হবে  যে, আল্লাহ আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। এতে নিজেকে হেফাজত করা সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,  ‘সে কি জানে না যে আল্লাহ দেখতে পাচ্ছেন।’ (সূরা আলাক : ১৪)
নফস যদি পরনারীকে ধর্ষণের জন্য লালসা করে তাহলে সঙ্গে-সঙ্গে নিজের মা,বোন,মেয়েকে কল্পনা করুন। এভাবে ভাবুন- ‘যেমনিভাবে আমার মা,বোন,মেয়ে কিংবা কোনো আত্মীয় স্বজন ধর্ষিতা হলে আমার যতটা কষ্টের, তেমনিভাবে আমার দ্বারা কেউ ধর্ষিতা হলে তার পরিবারের জন্য ততটা কষ্টের। এরূপ ভাবনার দ্বারা অন্তর স্থির ও শান্ত হয়ে যাবে। নিজেকে হেফাজত করা অধিকতর সহজ হবে। 
আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেন, "কোনো সুন্দরীর নারীর প্রতি আকর্ষণ হলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো কুশ্রীব্যক্তির কল্পনা করুন। এমন ব্যক্তির কল্পনা করুন যার রঙ কালো, চেহারায় দাগ, চোখ অন্ধ, চুল এলোমেলো, দাঁতালো চোয়াল, ঠোঁট মোটা, নাক থেকে পানি বেয়ে ঠোঁট অবধি পৌঁছেছে- যেখানে মাছি বসে আছে।" এভাবে কল্পনা করলে রুচিতে একপ্রকার ঘেন্না সৃষ্টি করে, যা আপনার অন্তর থেকে সুন্দরীর প্রতি আকর্ষণকে নষ্ট করে দিবে। 
ফাসেক ও অসৎ ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। যারা যৌনউত্তেজক কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, গুনাহকে যারা তুচ্ছভাবে পেশ করে, ওদেরকে ছেড়ে আপনি সৎলোকদের সঙ্গ নিন, যারা আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে আপনাকে সহায়তা দেবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,  “মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও”। (তিরমিযি ২৩৭৮)
ধর্ষণের কামনাবাসনা থেকে আত্মরক্ষার অন্যতম উপায় হচ্ছে যথাসময়ে বিয়ে করা ও বেশী বেশী রোজা রাখা।নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেন,
“হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে; এবং যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে।” (সহীহ বুখারী ৪৬৯৬, ইফা)
অবশেষে কুরআন সুন্নাহর আমল করার মাধ্যমে বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আশা করা যায় কিছুটা হলেও সমাজ থেকে ধর্ষণ প্রবনতা কমবে।


লেখক: কলামিস্ট। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024