আলেম-ওলামাদের মর্যাদা ও তাদের বিরুদ্ধাচরণের পরিণতি

                  মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন 
আলেম-ওলামা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তারা  সাধারণ কোনো মানুষ নয়। তাঁদের সাথে  সম্পর্ক সরাসরি সারা বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। কুরআন-হাদীসের ইলম অর্জনকারীই হলেন আলেম। আলেম ওলামাদের সম্মান স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন।আলেম-ওলামাদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। তারা হলেন মাথার তাজ। তাদেরকে সম্মান করা আমাদের  ঈমানী দায়িত্ব। তাদেরকে সম্মান করা মানে দ্বীন ইসলাম আর ধর্মকে সম্মান করা।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, অনুসরণ করো রাসুলের এবং তোরমাদের মধ্যে যাঁরা কর্তৃত্বসম্পন্ন (ন্যায়পরায়ণ শাসক ও আলেম) তাঁদের।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী) আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সুরা জুমার, আয়াত-৯)। আল কুরআনে রয়েছে, ‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা  বৃদ্ধি করেন।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত-১১)।
আলেম ওলামাগণ হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে হেদায়েতের বাতিস্বরূপ। এই হেদায়েতের বাতি যে দিন বন্ধ হয়ে যাবে, সে দিন পৃথিবী অজ্ঞতার আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘উলামাদের দৃষ্টান্ত ওইসব তারকার মতো যাদের দ্বারা স্থলে ও জলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যখন তারকাসমূহ আলোহীন হয়ে যায় তখন পথচারীর পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকে’ (মুসনাদে আহমদ-৩/১৫৭)।
আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বৃদ্ধ মুসলমান, কোরআনের আদব রক্ষাকারী ও কোরআন অনুযায়ী আমলকারী হাফেজ এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশার সম্মান করা মহান আল্লাহর সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৫৩)।
হাদীস শরীফে এসেছে, ‘জমিনে আলেমদের অবস্থান আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যখন মানুষ তা দেখে, পথ চলে। যখন তা অদৃশ্য হয়ে যায়, অস্থির হয়েপড়ে।’ (বায়হাকি : ১/৩৫৪)। 
হাসান বসরি (র.) আলেম ওলামাদের মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘আলেমরা না থাকলে মানুষ গবাদিপশুর তুল্য হয়ে যেত।’
আলেম ওলামাগণ আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার কাউকে ভয় করে না। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত-২৮)।
হাজারো বাধা বিপত্তি, জেল জুলুম এমন কি ফাঁসির রশিকেও আলেম ওলামা ও পীর মশায়েখগণ তোয়াক্কা করে না। তারা জালিমদের কাছে মাথা নত করে না।  যা প্রমাণ মিলেছে অতীত ও বর্তমানে। 
আলেম-ওলামাগণ হচ্ছে নবী-রাসূলদের উত্তরসূরী। আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখদের কটাক্ষ করা এবং তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা মানে নবী রাসূলদের অপমানিত করা। আলেম ওলামাদের বিদ্বেষীদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়ংকর এবং ভয়াবহ। হাদীসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ , ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি করবে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’ (বুখারি, হাদিস নং-৬৫০২)।
উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নাই, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১৪৩
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহ: বলেন" আলেমেদের গোশত বিষাক্ত যে তার ঘ্রাণ নেয় অসুস্থ হয়ে যায়, আর যে তা ভক্ষণ করে মরে যায়!" (আল মুয়ী'দ ফী আদাবিল মুফীদ ওয়াল মুস্তাফীদ:৭১)।
উম্মতের শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায় উলামায়ে কেরামকে গালি দেওয়া, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা আরো জঘন্যতম কাজ। আফসোস! আমাদের দেশে কিছু নামদারী মুসলমান নাস্তিক মুরতাদরা প্রতি নিয়ত আলেম ওলামা ও পীর মশায়েখদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ ও অবমাননা করে যাচ্ছে। আল্লামা জাইনুদ্দিন ইবনে নুজাইম মিসরি (রহ.) (৯৭০ হি.) বলেন, যদি কেউ কোনো আলেম বা ফকিহকে ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়া (আলেম হওয়ার কারণে) গালি দেয়, তাহলে সে কাফির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ (আল-বাহরুর রায়েক : ৫/১৩২)
ইমাম ইবনুল মুবারাক রহ: বলেন-" যে আলেমদের অবজ্ঞা করে তার আখেরাত বরবাদ হয়।" ( সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/৪০৮)।
ইমাম ইবনে আসাকির আদ দামেশক্বী (রহ:) বলেন,
"আলেমদের গোশত বিষাক্ত। যারা তাদের মর্যাদাহানি করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি সুস্পষ্ট। যে ব্যক্তি উলামায়ে কিরামের বদনাম ও ছিদ্রান্নেষনে লিপ্ত হয়ে তাদের জবান চালায়,আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তার মৃত্যুর আগেই তার কলব (অন্তর) -কে মৃত করে করে শাস্তি দিয়ে থাকেন।"

ইমাম হাফেজ আবুল কাসেম ইবনে আসাকির (রহ.) বলেন, হে ভাই জেনে রাখো, উলামায়ে কেরামের দোষ চর্চা করা বিষাক্ত জিনিস। আল্লাহ তাআলার অভ্যাস হলো উলামায়ে কেরামের কুৎসা রটনাকারীকে তিনি লজ্জিত করেন (এটা কারো অজানা নয়)। যে ব্যক্তি উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করবে আল্লাহ তার মৃত্যুর আগে তার অন্তরকে মৃত বানিয়ে দেবেন। (আত-তিবয়ান ফি আদাবে হামালাতিল কোরআন : ২৭-২৯)
ইমাম আহমদ ইবনু আল আযরায়ী' রহ: বলেন- "আহলুল ইলম তথা আলেমদের- বিশেষ করে আকাবির আলেমদের-কুৎসা রটনা করা, তাদের নামে আক্রমণাত্মক কিছু বলা কবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।" ( আর রাদ্দুল ওয়াফের:১৯৭)। 
কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী নবীগণের পরেই আলেমদের স্থান। সাধারণ মানুষের তুলনায় আলেমদের মর্যাদা অনেক ওপরে। সুতরাং আমরা যারা আলেম হতে পারিনি, আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হলো আলেমদের যথাযথ সম্মান করা।আর তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ আচরণ ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য থেকে বিরত থাকা। একইসাথে  তাঁদেরকে অন্তর থেকে আল্লাহর জন্য  ভালোবাসা।


লেখক : কলামিস্ট। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024