সুদ মুক্ত সমাজ গড়তে কর্জ হাসানাই একমাত্র সমাধান 

                    মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
ইসলামী দৃষ্টিতে সুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এই নিষিদ্ধ জিনিসটি অধিকাংশ মানুষের রন্ধে রন্ধে ঢুকে গেছে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, "যারা সুদ খায়,তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে,যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি,যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে,তারা বলেছে :ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মত।অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে,তা তার।তার ব্যাপারে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। যারা পুনরায় সুদ নেয়,তারাই দোযেখে যাবে।তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।" (সূরা বাকারাহ-২৭৫)
সমাজে কিংবা রাষ্ট্রে কর্জে হাসানার প্রথা চালু না থাকায় আমাদের সমাজে সুদের প্রচলন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দেশে ধনী দরিদ্রের বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩০)। 
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুদ পরিহার করার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,"তোমরা যদি সুদ পরিহার না করো, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও।" (সূরা আল বাকারা: ২৭৯)।
হাদীস শরীফে এসেছে,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের সাক্ষী  ও সুদের লেখকের ওপর। ’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৩৩)। 
হাদীস শরীফে আছে, আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, "তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অভিশাপ করতে শুনেছেন সুদখোরের প্রতি, সুদ দাতার প্রতি, সুদের প্রমাণপত্র লেখকের প্রতি ও সাদকা প্রদানে বাধাদানকারীর প্রতি। আর তিনি নিষেধ করতেন মৃতের  জন্য বিলাপ করা হ’তে।" (নাসাঈ, মিশকাত হা/২৮২৯)
সুদ মুক্ত সমাজ গড়তে কর্জে হাসানার বিকল্প নেই। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে কোনো কিছু ঋণ দিলে তাকে ‘কর্জে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলে। অর্থাৎ এমন ঋণ বা কর্জ দেয়া যেটা সময়মতো পরিশোধ করা হবে; কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্ত অর্থ বা সুবিধা নিতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য হলো, যাতে করে মানুষ পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসা এবং একে অপরকে সহযোগিতা প্রদান করা। অবহেলিত সমাজের প্রয়োজন পূর্ণ করা। আর্থিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম হলো 'কর্জে হাসানা' বা উত্তম ঋণ।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মানুষকে উত্তম ঋণ প্রদানের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। উত্তম ঋণের বহুগুণ বিনিময় ঘোষণা করেছেন। 
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, "এমন কে আছে যে আল্লাহকে কর্জ কিংবা ঋণ দেবে উত্তম ঋণ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তারই নিকট তোমরা ফিরে যাবে।" (সূরা বাকারাহ-২৪৫)।
আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, "কে সেই ব্যক্তি,যে  আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।" (সূরা আল হাদীদ-১১)।
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন, "নিশ্চয় দানশীল পুরুষগণ ও নারীগণ এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের দেয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।" (সূরা আল হাদিদ : ১৮)।
আল কুরআনে আরো এসেছে, "যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও ধৈর্যশীল।" (সূরা- তাগাবুন, আয়াত -১৭।

আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দেয়ার অর্থ হচ্ছে গরিব-দুঃখী, অভাবীদের, যাদের প্রয়োজন, তাদের ঋণ দেয়া। 
রাসূল সা: বলেছেন, কোনো একজন মুসলিম অন্য মুসলিমকে দু’বার ঋণ দিলে এ ঋনদান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ একবার সদকা করার সমতুল্য। (ইবনে মাজাহ : ২৪৩০)
বর্তমান যুগে সুদ মহামারী আকারে প্রসার ও প্রচার লাভ করেছে। যতদিন সমগ্র জাতি কিংবা উল্লেখযোগ্য দল কিংবা রাস্ট্রের দায়িত্বশীলরা পূর্ণ মনোযোগ সহকারে একাজে সংকল্পবদ্ধ না হয়, ততদিন দু'চার,দশ জনের পক্ষে কঠিন। 




লেখক : কলামিস্ট। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024