মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন (রহঃ): একজন আদর্শ শিক্ষক ও পথ পদর্শক

              মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন (রহঃ)। তিনি চট্টগ্রাম  জেলার চন্দনাইশ পৌরসভা এলাকার মাওলানা মঞ্জিলের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুফতি শফিউর রহমান (রহঃ)। (তিনি “মুফতি সাহেব” নামে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি নিজ এলাকা চন্দনাইশে হাশিমপুর মকবুলিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসা এবং জোয়ারা ইসলমিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ পদে ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সহিত নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।) মাতার নাম আসমা খাতুন, দাদার নাম সৈয়্যদ হাসান মিয়াজি। মাওলানা বোরহান উদ্দীন (রহঃ) তাঁর পিতার ৯ ছেলের ৫ম পুত্র। তাঁর বংশ পরিক্রমা হল-মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন বিন শফিউর রহমান বিন সৈয়্যদ হাসান মিয়াজি বিন নুরুদ্দীন। বাল্যকালে তাঁর শ্রদ্ধেয়া আম্মাজান মারা যান। মাতৃহারা এ শিশু তাঁর মুফতি পিতা শফিউর রহমান (রহঃ) এর তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি  জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় বাল্য হতে  আলিম পর্যন্ত, দারুল উলূম কামিল মাদ্রাসা হতে ফাজিল এবং সরকারী মাদ্রাসা আলিয়া-ঢাকা হতে কামিল সহ প্রতিটি  পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সাথে চট্টগ্রামের রেলওয়ে হাই স্কুলে প্রধান মৌলভী হিসেবে অবসরের পূর্ব পর্যন্ত দক্ষতা সাথে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবন শুরুতে তিনি কিছুদিন জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ইসলামের খেদমতে মাওলানা মন্জিল মুফতি শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদে খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মত বলিষ্ট সৎ কথা বলার লোক আজ সমাজে বিরল। তিনি কোন দিন কাউকে তোষামোদ করে কথা বলতেন না। যা সত্য তা তিনি অকপটে বলে যেতেন। কিছুর ভয় করতেন না। তার আদর্শে তিনি ছিলেন অটুট।
মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন (রহঃ) মাত্রা অনুযায়ী পান খেতেন।তাঁর চলাফেরা ছিল অত্যন্ত সাধারণ। জাঁকজমকপূর্ণ মূল্যবান বস্ত্র তিনি কখনো পরিধান করতেন না।তাঁর ব্যবহার্য বস্ত্রাদি তিনি নিজেই ধুতেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভরশীলতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। আল্লাহর উপর ভরসা তাঁর একমাত্র অবলম্বন ছিল। তিনি পরনির্ভরশীলতাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ মুহুর্তে পর্যন্ত ঘৃণা করে গেছেন। ব্যক্তিত্বের প্রভাবের কারণে তিনি সামান্য কাজ ও পরনির্ভরশীল হতেন না। সংসারের যে সব কাজ আঞ্জাম দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল তিনি ইহার জন্য স্ত্রী,ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী, ছাত্র-ছাত্রী, আত্মীয় স্বজন ও ভক্তবৃন্দের কারো মুখাপেক্ষী হতেন না। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ভোগ বিলাস, আরাম-আয়েশ মোটেই পছন্দ করতেন না।অপরাগতার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নিজ সন্তান-সন্তুতি থাকার পরও তিনি নিয়মিত বাজার থেকে বাজার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করে সুন্দরভাবে সংসার পরিচালনা করতেন।তিনি অত্যন্ত পরহেজগার ও নীতিবান ছিলেন। সব সময় খোদার উপর ভরসা করতেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, সহজ, সদালাপী ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।পরনিন্দা,সমালোচনা,পরশ্রীকাতরতা ও মিথ্যা তাঁর মধ্যে ছিল না। তিনি এগুলো পছন্দও করতেন না। 
৩০ আগষ্ট ২০১৯ রোজ শুক্রবার রাত ১১.০০ ঘটিকায় তাঁর প্রভুর ডাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরের দিন বিকেল ৩.০০ ঘটিকায় জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ঐতিহাসিক ময়দানে তাঁর জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মেঝো ভাই   মাওলানা মাহফুজুর  রহমানের ইমামতিতে উক্ত জানাযার নামাজ সম্পন্ন হয়।  পরে তাঁকে তার পারিবারিক কবরস্থান মাওলানা মঞ্জিলে দাফন করা হয়।আল্লাহ পাক তাঁকে আন্বিয়া, সোলাহা ও শুহাদার সাথে জান্নাতুল ফেরদাউসের আলা ইল্লিয়িনে মর্যাদাপূর্ণ স্থান নসীব করুন।দ্বীনের খেদমতে মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন (রহঃ)'র বহুমুখী অবদান ও ত্যাগ অবিস্বরণীয়।ইসলামের সঠিক ও মূলধারাকে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আজীবন প্রয়াস চালিয়েছেন। তাঁর জীবন ছিল সত্যিকারভাবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। তাই এ দেশের মানুষের মনের মণিকোঠায় তিনি বেঁচে থাকবেন।শিক্ষক সমাজে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন একজন আদর্শ শিক্ষক। ছাত্র সমাজের কাছে একজন প্রাণপ্রিয় মান্যবর উস্তাদ।আর সাধারণ জনগণের কাছে সম্মানিত, মান্যগণ্য ব্যক্তিত্ব।আসুন আমরা এই মহান আলেমের অনুপম চারিত্রিক ও আদর্শ অনুসরণ করে দ্বীনের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত করি।


লেখক: কলামিস্ট।
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024