আমার দেখা শাহ মাওলানা ইউনুছ  (রহ) 
                   মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় যে কজন ব্যক্তিত্ব তাদের কীর্তিতে আজীবন মানুষের মনের মণিকোঠায় অমর হয়ে আছেন তন্মধ্যে পদুয়া ইউনিয়নের ধলিবিলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মিয়াজি পরিবারের সদস্য শাহ মাওলানা ইউনুছ  (রহ) অন্যতম।তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইসমাঈল মিয়াজি।তাঁর মাতার নাম ছায়েরা খাতুন।তারা ২ ভাই ১ বোন।ভাইবোন সবার মধ্যে তিনি সবার বড়। আত্মীয়তার দিক দিয়ে তিনি আমার ছোট আপুর শ্বশুর। সেই হিসেবে আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন রহ: (তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় সাবেক মুহাদ্দিস,সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় সাবেক অধ্যক্ষ,চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীস পদে নিয়োজিত ছিলেন।)'র বেয়াইন।  আমি তাঁকে খালাব্বা বলে ডাকতাম। তিনি  আমাকে ফু'তারা বলে ডাকতো। তাঁকে চেনা ও জানার আমার অনেক সুযোগ  হয়েছে।
শাহ মাওলানা ইউনুছ  (রহ)  অত্যন্ত পরহেজগার ও নীতিবান ছিলেন। সব সময় খোদার উপর ভরসা করতেন। ধর্ম নিয়ে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করতেন না। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, সহজ, সদালাপী ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। পরনিন্দা,সমালোচনা,পরশ্রীকাতরতা ও মিথ্যা তাঁর মধ্যে ছিল না। তিনি এগুলো পছন্দও করতেন না। আমার জানা মতে তিনি একজন হক্কানী আলেম ও ত্বরীক্বতের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তিনি গারেংগিয়া দরবারের অন্যতম মহান সাধক  হযরত বড় হুজুর (রহ:) এর খলিফা ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি নিজেকে প্রচার করতে কখনও পছন্দ করতেন না। তিনি নিজ দায়িত্ববোধের তাড়নায় সঠিক ত্বরীকার প্রচার প্রসার এবং সংরক্ষণের জন্য যে পরিশ্রম করে গেছেন তা তরীকতের জগতেই শুধু নয়, সবার জন্য  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নিজ ত্বরীকার আলেম ওলামা ও পীরসহ অন্যান্য ত্বরীকার আলেম ওলামা ও অলীয়ে কেরাম গণের প্রতি ভক্তি এবং শ্রদ্ধা ছিল শাহ মাওলানা ইউনুছ  (রহ)  এক অনন্য উদাহরণ। তিনি প্রত্যেক হক্কানী আলেম ওলামা ও অলীয়ে কেরামগণের মাজার যিয়ারতে সফর করতেন। তবে  যে সব মাজারে কিংবা দরবারে ওরশের নামে বেহায়াপনা ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ হয় সেখানে তিনি যেতেন না। এমন কি সেইসব দরবারের আলেমদেরকেও ঘৃণা করতেন। ইসলাম ও শরীয়তের সুরক্ষায় এবং রাসূল পাক (সাঃ) এর মান সম্মান সমুন্নতা রাখার ব্যাপারে তিনি সব সময় নির্ভীক ভূমিকা পালন করেন। তিনি  ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সত্য প্রতিষ্ঠায় অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। তিনি অতিথি পরায়ন ছিলেন।  তার সাথে সাক্ষাতের জন্য  এবং ত্বরীকতের কাজে অসংখ্য লোক আগমন করতেন। তিনি তাদেরকে বিনা মেহমানদারীতে ফিরিয়ে দিতেন না। কারো  উপহার লাভের লোভ তাঁর মধ্যে ছিল না।তিনি অত্যন্ত স্বল্পহারী ছিলেন। তিনি কোনদিনই তার পরিমাণের বেশী খেতেন না। 
আমি যখনই ছোট আপুর শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাইতাম তখনই তাঁকে ঘরে বসে কুরআন তেলাওয়াত, অজীফা পাঠরত কিংবা তাঁর বাড়ীর কিছুদূরে ধলিবিলা অছিউর রহমান চৌধুরী কেন্দ্রীয় জামে  মসজিদে এলাকার মানুষদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দিতে দেখেছি। এলাকার মুরাব্বীদের অনুরোধে তিনি এই মসজিদে আমৃত্যু পর্যন্ত ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
শাহ মাওলানা ইউনুছ  (রহ) ২৯শে জানুয়ারী ২০১৫ সালে রোজ বৃহস্পতিবার আছরেরর পর  দুনিয়ার সকল মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে শেষ নি:শেষ ত্যাগ করেন। পরেরদিন জুমাববার বিকাল ৩ ঘটিকার সময় ধলিবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর বড় ছেলে মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকীর ইমামতিতে উক্ত জানাযার নামাজ সম্পন্ন হয়। পরে তাঁকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহ পাক শাহ মাওলানা ইউনুছ  (রহ) কে আন্বিয়া, সোলাহা ও শুহাদার সাথে জান্নাতুল ফেরদাউসের আলা ইল্লিয়িনে মর্যাদাপূর্ণ স্থান নসীব করুন। তাঁর জীবন ছিল সত্যিকারভাবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। তিনি একজন আদর্শ পিতার পাশাপাশি একজন মানুষ গড়ার কারিগর কিংবা আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। এমন কি একজন অভিভাবকও বঠে। ছাত্র সমাজের কাছে একজন প্রাণপ্রিয় মান্যবর উস্তাদ।আর সাধারণ জনগণের কাছে সম্মানিত, মান্যগণ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।আসুন আমরা এই মহান আলেমের অনুপম চারিত্রিক ও আদর্শ অনুসরণ করে দ্বীনের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত করি।


লেখক : কলামিস্ট। 
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024