রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম ডাইংপাড়া। এ গ্রামের কৃষি অনেক উন্নত, আধুনিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর। এই গ্রামের কৃষক মোঃ রাকিব হাসান। কৃষি ছিল রাকিবের স্বপ্ন। দীর্ঘ দিন ধরে কৃষি কাজ করেন সে। এখন সে স্বপনো পুরন করে কৃষিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। 

সে তার ০৮ বিঘা আম বাগানের পতিত জমিতে মাচা করে লাউ ও মাটিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ শুরু করেছে। তার দৃষ্টিনন্দন লাউ বাগান দেখে সকলের মন জুড়িয়ে যায়।

কৃষক রাকিব হাসান এবারই প্রথম উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ ও উপসহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার এর পরামর্শে আম বাগানের পতিত জমির ফাঁকা যাওগায় একই জমিতে মাটিতে মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া , মাচায় লাউ চাষ শুরু করে। এতে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আম বাগানের পতিত জমিতে সবজি চাষ করা যায়, প্রতিদিন অনেক লোক তা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন! আম বাগানের পতিত জমিতে চাষকৃত নিরাপদ ও পুষ্টিকর সবজিগুলোর মধ্যে মিষ্টিকুমড়া , চালকুমড়া,  লাউ উল্লেখযোগ্য। চাষকৃত নিরাপদ ও পুষ্টিকর টাটকা ফলমূল ও সবজির একদিকে যেমন তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরন করছে, অন্য দিকে প্রতিবেশিদের পুষ্টির চাহিদা পূরনে সহযোগিতা করছে সে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের চাহিদা পুরনের পাশাপাশি অতিরিক্ত শাক সবজি বাজারে বিক্রি করে সে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

কথা হয় চাষি রাকিব হাসানের সাথে। রকিব বলেন, ঈশ্বরীপুর ব্লকের যুগিডাইং গ্রামে ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বারি আম ৪, কাটিমন, আম্রপালি জাতের আম রোপন করি ৪ বছর পূর্বে। আমার বাগানের ভিতরে অনেক জায়গা ফাঁকা পতিত পড়ে ছিল। 

গোদাগাড়ী কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার আমাকে পরামর্শ দেন আম বাগানের পতিত জমিতে সবজি চাষ করার জন্য। তার পরামর্শে আমার আম বাগানের পতিত জমিতে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করি। বর্তমানে জমি থেকে লাউ ও মিষ্টি কুমড়া উঠতে শুরু করেছে। দাম ভালো থাকায় আমি এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া ও লাউ বিক্রি করেছি। আশা করছি খরচ বাদে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি লাভ হবে। 

তার উৎপাদিত লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া  ইতিমধ্যে ট্রাকে যোগে রাজধানী ঢাকার কাওরন বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। তার দেখাদেখি অন্য সব চাষিরাও আম বাগানের পতিত জমিতে লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, পটল, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি  চাষ শুরু করেছেন। ফলে ওই এলাকার কৃষকদের তাদের নিজ পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। 

তার আম বাগানের পতিত জমিতে সবজি চাষ দেখে ধামিলা এলাকার কৃষক মোঃ মনিরুল ইসলামের, পালপুর এলাকার কৃষক মোঃ সাহাবুদ্দিনসহ আরো অনেকে পতিত জমিতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর সবজি চাষ শুরু করেছে। 

কৃষকরা তাদের সবজির জমিতে সুষম সার ব্যবহার, জৈব সার, ছাই, জৈব বালাই নাশক, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও রাসায়নিক সারের সীমিত ব্যবহার করছে।

উপসহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার বলেন, আম বাগানের পতিত জমিতে সব্জি চাষ করার ফলে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি পতিত জমি চাষের আওতায় আসছে। ফসলের ঘনত্ব বেড়েছে। কৃষক জৈব বালাইনাশক, হলুদ ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করার ফেলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন হচ্ছে। রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমেছে। এতে করে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাঁকা না থাকে সেই লক্ষ্যে আম বাগানের পতিত জমিতে সবজি চাষে কৃষককে উদ্বোদ্ধ করে সবজি চাষ করা হচ্ছে। গোদাগারীতে অনেক আম বাগান সহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান রয়েছে, সেই সকল ফলের বাগানের পতিত জমিকে সব্জি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। 


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023