|
Date: 2024-04-19 19:05:59 |
প্রথমবারের মতো আগামী ২২ এপ্রিল সোমবার বাংলাদেশ সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তার এই সফরটি হবে দুই দিনের।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি যে ঢাকা সফরকালে কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি, জনশক্তি রপ্তানি, ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে প্রায় ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
জ্বালানি: কাতারে মধ্যপ্রাচ্যের ৬ষ্ঠ এবং বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম জ্বালানি তেলের মজুদ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ১.৮-২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে কাতার থেকে অতিরিক্ত ৩ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তাই শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এই সফরে বাংলাদেশের উচিত হবে আরো বেশি সম্ভব দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি তেল আমদানি বিষয়ক এমওইউ ও চুক্তি করে রাখা। যা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য লাভজনক ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে।
জনশক্তি: কাতারে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের একটি বিপুল অংশ কাজ করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে বসবাস করছেন প্রায় চার লাখ বাংলাদেশী। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনা উঠে এসেছে বাংলাদেশ থেকে ২০২০ সালে ৩ হাজার ৫০৩ জন কাতার গিয়েছেন। এছাড়া আগের বছর দেশটিতে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ২৯২ জন। এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝতে পারা যায় বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রাপ্তির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের এই তেল সমৃদ্ধ দেশটি থেকে। আমিরের সফরের খবরে প্রাবসীদের মধ্যেও নিঃসন্দেহে এক ধরনের স্বস্তি কাজ করছে। আমি মনে করি আমিরের এই সফরের মাধ্যমে দেশটিতে নতুন করে বাংলাদেশী শ্রমবাজারের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। পাশাপাশি বর্তমানে কাতার প্রবাসীদের যেসব চাহিদা রয়েছে, দৈনন্দিন সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হোক ও এই বিষয়ে ফলপ্রসূ অগ্রগতি সাধিত হোক।
নিরাপত্তা সহযোগিতা: বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে জানতে পেরেছি যে গত বছরের মার্চে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। দেশটির আমিরের ঢাকা সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। ওই সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা রয়েছে। এই মুহূর্তে কাতারের নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় কোস্টগার্ডের লোকজন কাতারে কাজ করছেন। সুতরাং নিরাপত্তা সহযোগিতায় কাতারের সহায়তা বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে এই বিষয়ে যতটুকু সম্ভব তাদের থেকে নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি ও এমওইউ করে নেয়া।
ইতোমধ্যেই কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খুবই চৌকস মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে কাতারের সহযোগিতা চাওয়া।
এছাড়াও ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির যুক্ত হওয়া, গবেষণা, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ এইসব অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাতারের সাথে চুক্তি ও এমওইউ স্বাক্ষর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
তাছাড়া কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে তাঁর নামে রাজধানীর একটি সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকার বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালসী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি আমিরের নামে নামকরণ করা হবে। কাতার বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক এবং আমিরের এই সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর নামে এই পার্ক ও রাস্তার নামকরণ করা ইতিবাচক হিসাবেই দেখি।
তাই কাতারের আমিরের এই সফরটিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশের কল্যাণের স্বার্থে যত বেশি সম্ভব বিভিন্ন সেক্টরে চুক্তি ও এমওইউ সই করে নেয়া। যা আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।
মোঃ নাজমুল হাসান: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Email: pressnazmulbd@gmail.com
© Deshchitro 2024