|
Date: 2024-05-22 00:55:25 |
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বেকারত্ব, যার বৃহৎ অংশটিই শিক্ষিত বেকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে প্রায় ৪৭ জন বেকার।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় দেশে প্রায় ১০ লাখের বেশি অবৈধ বিদেশি শ্রমিক বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে। ফলে যেমন দেশের নাগরিকরা যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিপুল অংকের বিদেশী অর্থ পাশাপাশি ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছি না। তথ্য অনুসারে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেশ থেকে অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে ।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চ শিক্ষিত। যাঁদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাঁদের বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। কিন্তু অন্যদিকে অবৈধ বিদেশিরা প্রতি বছর অবৈধ হওয়ায় তারা ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান না করে দেশের টাকা পাচার করছে।
ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের রাজস্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সৃষ্টি হয়েছে ডলার সংকট পাশাপাশি মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেও হুমকি দেখা দিচ্ছে।
প্রতিনিয়ত দেশের নাগরিকরা কর্মের সন্ধানে হন্য হয়ে ছুটছে। দেশ ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে অবৈধভাবে বাংলাদেশী অভিবাসী সংখ্যা আশঙ্কা জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপের ভাষ্যমতে ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি মারা গেছেন ২৮৩ জন।
কিন্তু বাংলাদেশে কাজ করা অবৈধ বিদেশের শ্রমিকরা এ দেশে ভ্রমণ ভিসায় এসে কর্মক্ষেত্র দখল করে চলেছে। এক তো পর্যটক ভিসায় এসে দেশের কর্ম ক্ষেত্রের কোন প্রবেশাধিকার নেই তার উপর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করে কর্মক্ষেত্র থেকে দিব্যি বাগিয়ে নিচ্ছে বিপুল অংকের মুদ্রা। আবার ধরা পড়লেও জরিমানার অঙ্ক খুবই কম, মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এটিও বর্তমান সময়ে সাথে সম্পূর্ণ বেমানান, এখানে আইনের সংশোধন প্রয়োজন।
এই অবৈধ বিদেশী শ্রমিকরা দেশের কর্মক্ষেত্র দখল করে অবস্থান করায় তারা ফরেনার্স আইন ১৯৪৬, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ সুস্পষ্টভাবে লংঘন করছে।
এই অবৈধ বিদেশী শ্রমিকের বৃহৎ অংশটি কর্মরত রয়েছে গার্মেন্টস ও আইটি সেক্টরে। তাই গার্মেন্টস ও আইটি সেক্টরের সংগঠনকে সতর্ক করা উচিত তারা যেন কোন অবৈধ শ্রমিককে কর্ম প্রদান না করে।
তাই আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া। মহান জাতীয় সংসদে অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের কাজের ব্যাপারে আরো কঠোর আইনের বিধিমালা তৈরি করা। তাদের উপযুক্ত ও কঠোর ব্যবস্থাই পারে বর্তমানের এই প্রকট ডলার সংকট তথা অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব থেকে শুরু করে শিক্ষিত বেকারের সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে।
© Deshchitro 2024