◾ প্রশ্ন: রাস্তায় কুড়ানো টাকা কী করা উচিত? অনেকে এই টাকা নিজের মতো করে খরচ করে। ফকিরদের দেয়। আবার কখনো দেখছি অনেকে মসজিদে দিয়ে দেয়। আসলে এই বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা কী? জানালে উপকৃত হবো ইন শা আল্লাহ।


(আবদুল হামিদ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা )


◾ উত্তর: (সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য)


ফিক্বাহশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়নে প্রমাণিত হয়, যে সমস্ত বস্তু কুড়িয়ে পাওয়া যায় তা দুই ধরনের হয়।


√ প্রথম প্রকার কুড়ানো বস্তুটি এমন, যা সাধারণত মানুষ তালাশ করে না। স্বল্পমূল্যের অথবা সামান্য কিছু জিনিস ইত্যাদি। এটার হুকুম হলো, আশেপাশে খোঁজ নিয়ে মালিক না পেলে কাউকে সাদকা করে দিবে অথবা কুড়ানেওয়ালা নিজেই ব্যবহার করবে। যদি সে সাদকা খাওয়ার উপযোগী হয়।


√ দ্বিতীয় প্রকার কুড়ানো বস্তুটি এমন, যা সাধারণত হারিয়ে গেলে মানুষ তালাশ করে। মূল্যবান জিনিস।


তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে, পাওয়া বস্তুর যথাযথ যত্ন করা। যথাযথ যত্ন নেওয়ার পরও ওই বস্তুর কোনো ক্ষতি হলে এ জন্য তাকে দায়ী করা যাবে না। আর প্রাপ্ত বস্তু তার কাছে আমানত হিসেবে থাকবে।


তারপর উদ্ধারকারীর দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃত মালিকের কাছে কুড়ানো বস্তু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। পৌঁছানোর জন্য এলান বা ঘোষণা করতে হবে। আশেপাশের খোঁজ নিতে হবে ও যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। হতে পারে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন, পত্রিকা কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খোঁজ নেয়া। প্রয়োজনে মাইকিং করা। থানায় জিডি করে রাখা। অর্থাৎ ঘোষণা দেওয়ার যত মাধ্যম আছে তা অবলম্বন করা।


যথাযথ চেষ্টা করার পরেও যদি প্রকৃত মালিক ও তার ওয়ারিশদের খোঁজ না পাওয়া যায়‌ এবং যদি এতদিন অপেক্ষা করার পর এই মর্মে প্রবল ধারণা হয় যে, মালিক আর ওই হারানো বস্তুর সন্ধান করবে না,তখন ওই বস্তুকে প্রকৃত মালিকের পক্ষ থেকে কোন গরীবকে সাদকা করে দায়মুক্ত হতে হবে। 


নিজে গরীব হলে নিজেও খেতে পারবে। (নিজে যদি যাকাত সদকা খাওয়ার উপযুক্ত হয়) অনুরূপভাবে মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের জন্য দেওয়ার অনুমতি আছে। তবে যে কোন একজনকে নির্দিষ্টভাবে মালিক বানিয়ে দিতে হবে।কিন্তু এই সম্পদ মসজিদে দেওয়া যাবে না। এটা বৈধ হবে না।


উল্লেখ্য যে, প্রকৃত মালিকের পক্ষ হতে সাদকা করে দেওয়ার পর যদি মালিক ফেরত আসে এবং এই দানের উপর রাজি থাকে তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। অন্যথায় প্রকৃত মালিক যদি মালের দাবি করে থাকে, তাহলে কুড়িয়ে পাওয়া ব্যক্তি পুরো সম্পদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। (আল্লাহ তায়ালা সবচে' বেশি ভালো জানেন)



√ তথ্যসূত্র:

(সুনানে আবু দাউদ, ১৭০৯) (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১৮৬৩০) (রদ্দুল মুহতার,৪/২৭৮) (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম,১২/৪৫৫) (হেদায়া,৪/৩৪৬) (ফতোয়ায়ে হক্কানিয়া,৬/৪০৩) (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত, ১১/১৪২-১৫০)(ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৮৯৪)


 ◾ সমাধান- মুফতী উসমান গণী নোমানী

মুহাদ্দিস, জামি'আ ইসলামিয়া আরাবিয়া। বলিয়ারপুর, সাভার , ঢাকা।


প্রিয় পাঠক, আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী বিষয়ক যত মাসলা মাসায়েল রয়েছে তা জানতে এবং সমাধানের জন্য যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন নিম্নোক্ত ঠিকানায়-osmangoninomani@gmail.com


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023