মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা: 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যেটি আজ রাতে ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়ে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাসহ উপকূলবর্তী অন্যান্য জেলা গুলোতে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।

এছাড়াও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড।

ঘূর্ণিঝড় রেমালকে ঘিরে জেলা প্রশাসন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও আতঙ্কে আছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে ওই এলাকার মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

তাদের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে। এজন্য জোয়ারের পানির তোড়ে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ৩০টিরও অধিক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলার সুলতান শাহজাহান বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি টেঁকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ আসলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর।

একই উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়নের নুরুল আমিন বলেন ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত তার ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাব হলে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের সময় বাঁধের কানায় কানায় পানি ওঠে। বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তবে এখানে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। যেটা শেষ হলে অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। তবে এখনও পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়াতে তার ইউনিয়নের মানুষদের নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো- ১) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান-অশনির পর জেলার অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। আপাতত নদী ভাঙ্গনের কোন সমস্যা নেই। তবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে। আর যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। আর এছাড়াও আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ করে রেখেছি। যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তারপরেও আমাদের উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন সকলে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে, ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024