পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, কৃষিক্ষেত,গাছপালা ও মৎস্যঘের সহ অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিসহ দমকা বাতাস শুরু হয়ে সোমবার (২৭ মে) বিকাল পর্যন্ত চলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব। এসময় টানা কয়েক ঘণ্টার ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মানুষ জীবিকার তাগিদেও ঘর থেকে বের হতে পারেননি। ফলে যারা দিন আনে, দিন খায় এরকম অনেকেই খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে পরে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত হও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।


অপরদিকে পায়রা ও শ্রীমন্ত নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পেলে রবিবার রাত ১২টার দিকে উপজেলা ভূমি অফিসে সামনের সড়ক, সুবিদখালী বাজার, পশু হাসপাতাল সড়ক, পূর্ব সুবিদখালী, পশ্চিম সুবিদখালী, সুবিদখালী বাজার ও ছৈলাবুনিয়া এলাকাসহ বিভিন্ন হাট বাজার ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বরিশাল-সুবিদখালী-ববরগুনা মহাসড়ক এবং মির্জাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানেই সড়কের উপর দিয়ে পানি উপচে পড়ায় রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে মাছের ঘের ও কৃষি ক্ষেত তলিয়ে যায়। বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কাঁচাঘর-বাড়ি, মসজিদ এবং পায়রা নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পয়েন্টের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। এদিকে গত রবিবার সন্ধ্যা রাত থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। অন্ধকারে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা নিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে- শুধু মির্জাগঞ্জ নয় পটুয়াখালী জেলা থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঝড় কমলে লাইন চেক করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হবে। 


এদিকে রেমালের তাণ্ডব লীলা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রবিবার রাতে কয়েক ফুট পানির নিচে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৫৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে গবাদি পশু নিয়ে ২ সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। 


পূর্ব সুবিদখালী গ্রামের নুরজামাল বলেন, বাহিরে শুধু পানি থৈ থৈ করছে। সিডরকেও হার মানিয়েছেন এ ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আমার মাছের ট্রলার সিডরেও ডুবে নায়, এই ঘূর্ণিঝড় রেমালে ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসে রুপ নেয়ায় আমার মাছের ঘের আর কৃষি তো প্রায় শেষ। ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা দেখেছি কিন্তু জলোচ্ছ্বাস এতো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। 


এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল'র প্রভাবে উপজেলার অসংখ্য মানুষ তাদের গবাদি পশুসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। রবিবার রাতেই আশ্রিতদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। দূর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৪টি মেডিকেল টীম প্রস্তুত রয়েছে এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ১টি কন্ট্রোল রুমখোলা হয়েছে। তবে পানি না কমলে দূর্ভোগ আরো বাড়তে পারে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024