|
Date: 2024-06-02 00:04:48 |
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
২ লাখ ৬৮ হাজার ৪১৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২৩ হাজার ৭৫২। এতে পোনে ৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন কম ভোট পড়েছে? এমন প্রশ্ন তোলেছেন ধর্মমন্ত্রী ও জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলাল।
শনিবার (১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে নিজ উপজেলায় ক্যান্সার, কিডনি রোগী, দুঃস্থ অসহায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝে সরকারি বরাদ্দের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুবিধাভোগীদের উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন প্রশ্ন ছোঁড়ে দেন ধর্মমন্ত্রী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী মন্ডল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, 'আমি আপনাদের একটি কথা বলতে চাই। এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেক লোকেও ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাননি। ভোট দেননি। নিজের বিবেক দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গেছে। আর আপনারা কেন ভোট দিতে কেন্দ্রে যান না।'
মন্ত্রী বলেন, 'ভাই, আমরা কী অপরাধ করেছি আপনাদের কাছে? সরকার এতো উন্নয়ন করছে। আর আপনারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যান না। আরে ভাই, যাঁরেই খুশি, তাঁরেই ভোট দেন না। তবুও ভোটকেন্দ্রে যান। আজ অনুদানের টাকা নিতে এসেছেন। অনুদান পেতে সারা বছর আপনাদের চাহিদা। কিন্তু নির্বাচন এলে ভোট দেন না।
প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, 'আপনারা ভোট যদি না দেন, তাহলে আল্লাহর কাছে জবাব দেওয়া লাগবে না? এতএব আগামী নির্বাচন থেকে যাঁকে ইচ্ছে হয়, তাঁকেই ভোট দিবেন। এসব কথা এই জন্য বলছি, কারণ আল্লাহ পাক আমাদের পবিত্র আমানত ভোট দিয়েছে। এই ভোট কাকে দিতে হবে? ন্যায়পরায়ন দেখে যাঁর উপর আস্থা আছে। যিনি ভালো কাজ করবে, তাঁকে ভোট দিতে হবে।'
উল্লেখ্য, গত ২১ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম। ফলে শুধু ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হয়।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনজন প্রার্থী। এই পদে টিউবওয়েল প্রতীকে ১৮ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক আখন্দ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. ফারুক ইকবাল হিরু মাইক প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৯৬। এছাড়া চশমা প্রতীকে ১ হাজার ১ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ কর্মী মো. আব্দুল লতিফ। এতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ২৩ হাজার ৭৫২টি, যা মোট ভোটারের ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এই পদে কলস প্রতীকে ১২ হাজার ১২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আবিদা সুলতানা যূঁথী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক আহ্বায়ক আঞ্জুমানয়ারা বেগম ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ১১ হাজার ৬৩০ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ২৩ হাজার ৮৭৯টি। যা মোট ভোটারের ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
স্থানীয সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী চেয়ারম্যান পদে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চলায়। অপরদিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও নোয়ারপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে গণসংযোগ করেন। গাইবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী নির্বাচনে প্রার্থী হলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করে নেতা-কর্মীদের মাঝে। বিষয়টি অনুধাবনের পর স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক বসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল আব্দুস সালামকে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর আপত্তিতে পুনরায় মাকছুদুর রহমান আনছারী নির্বাচনের লড়ার ঘোষণা দিলেও ধর্মমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করায় শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। কিন্তু নোয়ারপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করলে আওয়ামী লীগ নেতারা রাজনৈতিক বিশেষ সমঝোতা করায় তিনিও তাঁর প্রার্থিতা প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগেই প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুস সালাম। ফলে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হয়নি।
উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় ৯৩ ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪১৯ জন।
© Deshchitro 2024