|
Date: 2024-06-06 04:24:16 |
রাজধানীর পল্লবীতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে চিকিৎসকদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় প্রাণ হারালেন ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা নাদিয়া নূর (৩০)।
বুধবার (৫ জুন) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে ভর্তি হওয়া অন্তঃসত্ত্বা নাদিয়ার মৃত্যুর জন্য হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকদের অবহেলাকে দায়ী করেছেন তার পরিবার।
নাদিয়ার স্বামী আনিসুর রহমান পলাশ বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে ডায়রিয়া হলে শনিবার ভোরে নাদিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করলে সারা দিনে নাদিয়ার ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আসে এবং রাতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলে দেখা যায় পেটে ১৬ সপ্তাহের সন্তানও সুস্থ। কিন্তু পরের দিন নাদিয়ার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে সে ছটফট করছিল। কিন্তু রাত ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ডেকে কোনো ডাক্তারকে আনতে পারিনি। রাত ২টার কিছু পর একজন ডাক্তার আসেন। ততক্ষণে ওর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। পরে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এ সময় রোগীকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে অন্য হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
এ বিষয়টি আইসিইউর দায়িত্বরতদের জানালে তারা পোশাক বদলানোর কথা বলে রোগীকে দুই ঘণ্টা কোনো ধরনের স্যালাইন, অক্সিজেন ছাড়াই ফেলে রাখেন। রোগী চিৎকার করে বলছে আমার খারাপ লাগছে কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আইসিইউতে রোগীর বেডের পর্দা টেনে দেন এবং আমাকেও ঢুকতে দেননি। দুই ঘণ্টা পর আইসিইউ থেকে বের করে দিলে নাদিয়া ঠিকমতো সাড়া দিচ্ছে না। হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে ডাক্তারসহ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স টিম প্রস্তুত থাকলেও অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা না থাকায় আবারও এই আইসিইউতে নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ততক্ষণে পেটের ভিতরে বাচ্চা মারা যায়। এরপর একে একে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হতে শুরু করে। মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে চলে যায়। বুধবার ভোরে নাদিয়া মারা যায়।
নিহতের স্বামী বলেন, নাদিয়াকে ধাপে ধাপে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে চিকিৎসকদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা। রোগীর প্রাণ চলে যায় তবু ডেকে চিকিৎসকদের আনা যায় না। কিছু মানুষের অবহেলায় আমার চার বছরের মেয়েটিও আজ মা হারা হলো। অনাগত সন্তানের মুখও দেখতে পারলাম না। আমরা এর বিচার চাই। এভাবে হাসপাতালের গাফিলতিতে আর যেন কেউ প্রিয়জন না হারায়।’
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, আইসিইউর রোগীকে ওষুধ, স্যালাইন, অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর সাপোর্টে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করার কথা। তা না করে কোনো ধরনের সাপোর্ট ছাড়া দুই ঘণ্টা ধরে ফেলে রাখা হলে প্রাণহানির সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়।
হাসপাতালের আইসিইউর সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় পল্লবীর নিজ বাসভবনে নাদিয়ার প্রথম জানাজা হয়। এরপর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের লাইসেন্স নেয়া ডা. ছিবগাতুর রহমানের কাছে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।’ কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে ডিউটি অ্যাডমিন এবং ইনফরমেশন ডেস্কে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
© Deshchitro 2024