|
Date: 2024-06-13 15:27:22 |
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের ধূরুং কাঁচা এ যেন পাখির গ্রাম।দেখা মিলেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। গ্রামে প্রবেশের অনেক দূর থেকেই ভেসে আসে হাজারো পাখির কিচিরমিচির শব্দ। পাখির এ কলকাকলিতে মুখরীত পুরো গ্রামটি। প্রতিদিন পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। পাখিগুলো অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে এ গ্রামটিকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করছে এলাকাবাসী সহ ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। গাছেই গাছেই শালিক, চড়ুই, ঘুঘু, কোকিল, বুলবুলি, টিয়া, ডাহুক নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আবাসস্থল। পাখিদের কলকাকলি আর ছোটাছুটি উপভোগ করেন প্রাণ ভরে। এ যেন পাখিদের সঙ্গে এলাকাবাসীর গভীর ভালোবাসা।
ভোর হলেই পাখিরা এসে হাজির হয় আশেপাশের বিভিন্ন গাছে,মধুর কণ্ঠে কিচিরমিচির করতে থাকে আপনমনে। ডাল থেকে ডালে ঘুরে করে নাচানাচি। কেউবা আবার নিজেদের মধ্যে করে চলে খুনশুটি। খড়কুটো দিয়ে পাখিদের বাসা বাঁধার দৃশ্যও চোখে পড়ে। পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পাখিদের কলতান। পাখিদের সুললিত কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙে এলাকাবাসী।
দৈনন্দিন পাখির কলতানে মুখরিত করে রাখে চারপাশ। সচরাচর যেসব পাখি দেখতে পাওয়া যায় না, সেসব দুর্লভ প্রজাতির পাখিও রয়েছে এই এলাকায় বিভিন্ন ছোটো-বড় গাছে রয়েছে এসব পাখিদের বসবাস। সর্বত্রই রয়েছে পাখিদের অবাধ বিচরণ।
স্হানীয়রা বলেন, পাখির ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গা এটা আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। পাখিদের কিচিরমিচির শুনতে ভালোই লাগে। তাদের এই কিচিরমিচির ডাক শোনা এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের পুকুর পাড়ে বাঁশ ঝাড়ে অভয়াশ্রম হিসেবে বসবাস করছে পাখিগুলো। এমনিভাবে গ্রামের আরো কয়েকটি স্থানে নিবিড় বন-জঙ্গলের মতো অভায়শ্রম গড়ে তুলেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে আছে গ্রামটি। এসব পাখি স্বাচ্ছন্দ্যে গাছে বিচরণ এবং ঝাঁকে-ঝাঁকে ডানা মেলে উড়ে চলছে ইচ্ছেমতো। গত তিন -চার বছর থেকে উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপদ আশ্রয়ে যেন পাখিগুলো নির্ভাবনায় আবাস গড়ে তুলেছে। থাকার জন্য খড়কুটা দিয়ে বাসা বেঁধেছে। অনেক পাখি ডিম দেয়া শুরু করেছে এবং অনেকে বাচ্চাও ফুটিয়েছে। বিশেষ করে বিকালে ও ভোরে কিচির-মিচির শব্দে জানিয়ে দেয় তাদের সরব উপস্থিতি। পাখিদের কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে চারিদিক। এখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের জ্যাঠা বক, কানি বক, পানকৌড়ি, বাদুড়,রাতচোরা, ডাহুক, দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, বাবুইসহ নানান জাতের দেশীয় পাখি।
এই গ্রামের মানুষেরাও প্রকৃতিপ্রেমী। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগও নিয়েছেন তারা। গ্রামের ভেতরে কোন গাছ কাটা ও উচ্চ শব্দে আওয়াজ করাও নিষিদ্ধ। তবে প্রতি বছর বর্ষায় প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টির ও বাতাসের ফলে প্রায় কয়েক হাজার পাখির ডিম নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক পাখির বাচ্চাও মারা যায়।
গ্রামের টিপু নামের একব্যাক্তি বলেন, প্রথমে এসব পাখির শব্দ ও বিষ্ঠা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন সব সয়ে গেছে। গ্রামের সবাই পাখির প্রতি মমতাশীল। বাঁশ ঝাড়ের নিচে পুকুর থাকলেও পাখিরা কোন মাছ খায় না। সারাদিন বাহিরে চরা করে বিকালে বাসায় ফিরে। তখন বেশি দেখা মেলে। যখন আকাশে উড়ে মনে হয় আকাশ মেঘ করছে।
পাখি দেখা এবং ফটোসেশনের জন্য ঢাকা থেকে একদল পাখি প্রেমী গ্রামে এসেছিলেন।তারা বলেন, পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ সবাই। এক সঙ্গে এতো বেশি পাখি দেখার কখনো সৌভাগ্য হয়নি। স্মৃতি ধরে রাখতে নিজ ক্যামেরায় ছবি তুলেছেন তারা। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন এ পাখি প্রেমিরা।
© Deshchitro 2024