◾ মোঃ হেলাল উদ্দিন


৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। বাংলাদেশের জাতীয়  জীবনে এক কলংকময় দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট কালো রাত্রিতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পরে বঙ্গবন্ধুর  আজীবন রাজনৈতিক সহচর জাতীয় চার নেতা,বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম,প্রধানমন্ত্রী  তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রীসভার সদস্য  ক্যাপ্টেন অবঃ মুনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে  গুলি করে হত্যা করে।একাত্তরের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা সেদিন জাতীয় চার সূর্য সন্তানদের উপর গুলি করে ক্ষান্ত হননি। কাপুরুষের মত হায়েনারা গুলিবিদ্ধ দেহকে  বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে  একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল।


ইতিহাসের এমন নিষ্ঠুরতম হত্যাযঞ্জের  ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সারা বিশ্ব।



যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলের গেইটের দেয়ালে লাল রঙে লেখা থাকে "রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ।" কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন  বর্বরোচিত হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।


৩রা নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে কংলঙ্কময়, রক্তঝরা,বেদনা বিধুর একটি দিন।

সেদিন বাংলার আকাশ শোকে  স্তব্ধ, মর্মাহত, বেদনা বিধুর হয়ে  বৃষ্টি ঝড়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতাদের অসামান্য অবদান  অপরিসীম।

তাদের ঋণ কখনো শোধ করার নয়।

বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্বের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এই জাতীয় চার নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করে।


বরাবরই, আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি।জাতীয় সূর্য সন্তানদের প্রাপ্য কৃতিত্ব ও সম্মান দিতে পারি নাই।

পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা জাতীয় চার বীর সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের  প্রগতি সমৃদ্ধির অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল।


ইতিহাসের পাতা সর্বদা সত্য আর সুন্দরের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখে অনাগত ভবিষ্যতের জন্য।দেশের জন্য জীবন দেওয়া এ সকল বীর সন্তানেরা আমাদেরকে দেশপ্রেমের শিক্ষা দেন,মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জানলেও নীতি-আদর্শ আর বিশ্বাসের মূল্য দিতে শেখান,অন্যায়ের কাছে মাথানত না করতে শেখান,সত্য প্রতিষ্ঠায় শেষপর্যন্ত লড়ে যেতে শেখান।

জাতীয় চার নেতারা চাইলেই বড় বড় মন্ত্রীত্ব,বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে পারতেন।কিন্তু স্বাধীন দেশের উন্নয়ন যাত্রা ও একাত্তরের পরাজিত শক্তির কাছে মাথানত করেননি।

বঙ্গবন্ধু সহ জাতীয় চার নেতাদের রক্তের শোক  বহন করে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছে।


আমরা জাতীয় চার নেতাদের ঋন কখনই  ভুলবার নয়,যতদিন বাংলাদেশ আছে বাংলার মাটি,আকাশ,বাতাসে  জাতীয় চার সূর্য সন্তানদের  মনে রাখবে স্বর্ণাক্ষরে।তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে আমরা তরুণ,যুবকরা  দেশের তরে কাজ করে যাবো অবিরাম,দেশটাকে মাতৃ মমতায় ভালোবেসে জীবন দিতে কুণ্ঠিত হবো না কখনো। জাতীয় চার নেতার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তারা থাকুক আমাদের আলোচনায় কিংবা পরম শ্রদ্ধায়। 



মোঃ হেলাল উদ্দিন

লেখক ও শিক্ষার্থী


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023