পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকত থেকে’ই নাকি ভেসে এসেছে বিষাক্ত সাপ। ক’দিন আগে এমনই এক ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হলে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে পর্যটন সেবী সংশ্লিষ্টরা।


তারা বলছেন, সমুদ্র থেকে সাপ ভেসে আসার ছবি-ভিডিও’র বিষয়টি মিথ্যা, বানোয়াট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সাপের ছবি-ভিডিও দেখানো হয়েছে তা ইন্টারনেট থেকে নেওয়া হয়েছে। মূলত পর্যটন নগরীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে’ই এমন গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল।


এনিয়ে প্রশাসনও বলছে, এই যাবত সমুদ্রের পাড়ে সাপের কামড়ে হতাহতের কোন রেকর্ড নেই। পর্যটন শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন গুজব নির্ভর তথ্য প্রচার থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।


পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, রহস্যে ঘেরা সমুদ্র সৈকতে বৈরী আবহাওয়া সহ ভৌগোলিক কারণে মাঝে মধ্যে ভেসে আসে মৃত ডলফিন, জেলিফিশ, নীল তিমি, কাছিম, নানা সামুদ্রিক প্রাণী সহ ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। কিন্তু এই যাবৎ কখনো সাপ বা কোন সামুদ্রিক প্রাণীর আঘাতে হতাহতের খবর শুনা যায়নি।



তাদের অভিযোগ অতি উৎসাহী এবং কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের ক্ষতির প্রচেষ্টায় থাকা একটি মহল এই গুজব চালাচ্ছে। মূলত তারা গুজবের মাধ্যমে পর্যটকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে কক্সবাজারকে পর্যটক বিমুখ করে অন্য পর্যটন স্পটকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই অসুস্থ মানসিকতার মধ্য দিয়ে তারা শুধু কক্সবাজারের নয় সমগ্র দেশের পর্যটন শিল্পের ক্ষতি করছে।


সমুদ্র সৈকতের সাপ দেখার ছবি-ভিডিও’র প্রসঙ্গে সৈকতের চেয়ার ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন জানান, এই বিচে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি, এতকিছু দেখলাম কিন্তু কখনো সাপ দেখলাম না। যারা সাপের কথা বলছে তারা সম্পূর্ণ ভূয়া। এটি পর্যটন নগরীর ক্ষতি এবং আমাদের ব্যবসার ক্ষতির জন্য করছে।


বিচে ফটোগ্রাফার রিয়াজ উদ্দিন জানান, ‘তো কখনো দেখিনি। এছাড়া কোন ফটোগ্রাফার দেখেছে বলে জানা নেই। এসব ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট ও ভিউ বাড়ানোর জন্য করা হচ্ছে। এই মিথ্যা সংবাদ যারা প্রচার করছে তারা কক্সবাজারের শত্রু। তারা কক্সবাজার থেকে পর্যটক কমানোর জন্য’ই এমনটা করছে। তাদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।


বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহমান জানান, এই রহস্যময় সমুদ্র সৈকতে অনেক সময় অনেক কিছু ভেসে আসবে। কিন্তু সাপের কামড় বা কোন সামুদ্রিক প্রাণীর আঘাতে কেউ মারা যায়নি। এইটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়। যারা এসব কথা বলে তারা কক্সবাজারকে ভালবাসেনা। তারা পর্যটন শিল্পের শত্রু, তারা দেশের শত্রু। তারা একেক সময় একেক গুজব ছড়িয়ে দেশের ক্ষতি করছে। তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।



কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর সাধারণত সম্পাদক নুরুল কবির পাশা জানান, সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে যে সাপের ছবি ও ভিডিও দেখানো হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও চক্রান্ত। গুগলে সার্চ দিয়ে দেখা গেছে এই ছবি ও ফুটেজ নেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট থেকে। কেউ চাইলে আমার সাথে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এটি মূলত অন্য পর্যটন স্পষ্টকে তুলে ধরার জন্য কক্সবাজারের ক্ষতি করছে। এটি বোকামি ছাড়া কিছুই না। এতে শুধু কক্সবাজার না, পুরো দেশের পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হবে। যারা এই কাজ করছে তারা দেশদ্রোহিতা করছে।


কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সমুদ্র সৈকতে সাপের উপদ্রবে কোন পর্যটকের ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনার কোন খবর এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি গুজব। এছাড়া এই বিশাল সমুদ্রে কতকিছু ভেসে আসতেই পারে, তাই বলে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হয় এমন সংবাদ প্রচার করা উচিৎ নয়। এ ব্যাপারে সকলের সতর্ক থাকা উচিত।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024