মাদকাসক্ত ও পাচারে জড়িয়ে ভবিষ্যৎ ধ্বংস হচ্ছে শত শত তরুণের। এই মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে মিয়ানমার থেকে অবাধে মাদক, ইয়াবা পাচারের কারণে কক্সবাজার জেলা যেন মাদকের হাব হয়ে উঠেছে। ফলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে শত শত তরুণ। অল্প বয়সে মাদকে জড়িয়ে পড়া এমন দুই তরুণ শিহাব ও রাকিব(ছদ্মনাম)। মাদকাসক্ত হয়ে নিজেদের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করে অনেকটাই হতাশায় পড়েছেন তারা। তারা দুই বন্ধু চট্রগ্রামে পড়াশোনা করতে গেলে সেখানে জড়িয়ে পরেন মাদক সেবনে। সবকিছু হারিয়ে কক্সবাজার এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজনই। তারা বলেন, নিজেদের পরিবার ছাড়া কেউ কথা বলেন না। সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে হয়েছে বহুদিন। পরিবার পরিজন সকলের কাছে নিগৃহীত হতে হয়েছে । সবশেষে কক্সবাজারে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র রিহাব সেন্টারে এসে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা। এমনই মরণঘাতী মাদকের গল্প বলছেন এ দুই তরুণ।

 

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে তরুণদের মাদক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এমন গল্পই তুলে ধরেছেন তারা।


গতকাল মঙ্গলবার শহরের বড় বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে কক্সবাজার বড় বাজার এলাকায়। এরকম শহরের অলি গলিতে যেখানে সাংবাদিক দেখলেই হেনস্তা করেন কারবারিরা।


কক্সবাজার শহরের ১৭ টি পয়েন্টে, ইয়াবা, গাঁজা চোলাই মদসহ অন্যান্য মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। 


পর্যটন শহর কক্সবাজারে মাদকের আগ্রাসন বেড়েই চলছে। কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না মাদক পাচার, সেবন ও ব্যবসা। হুমকির মুখে তরুণ প্রজন্মের অনেকে শঙ্কায় অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রশাসনের আটক অভিযানের পরেও থেমে নেই মাদক কারবার। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আগের চেয়ে কমে এসেছে মাদক মামলা। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলার মাধ্যমে কিছুটা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে আদলতে বিচার প্রক্রিয়ায় মাদক মামলায় দণ্ড প্রাপ্ত হয়েছে অনেকেই। আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস ঘিরে নানা আলোচনায় রয়েছে কক্সবাজার শহরের বড় বাজার, রাখাইন পল্লী, টেকপাড়া, বাহারছড়া, পেশকার পাড়া,বাসটার্মিনাল, কলাতলি, পাহাড়তলী, লাইট হাউজ, গোলদিঘি সহ নানা স্পট।


কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া জানায়, গেলো বছরে ৯ লাখ পিস ইয়াবা, ২৪ কেজি গাজা, ৮৬৫ লিটার,চোলাই মদ, ৪ কেজি ৭৬ গ্রাম হিরোইন, ২ কেজি আইস জব্দ করা হয়েছে। সর্বমোট ২২২টি মাদক মামলায় নিয়মিত ১৭২টি ও মোবাইল কোর্টে ৫০টি মামলা রুজু করে ২৭৫ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 


সম্প্রতি পুলিশের কোন অভিযান চোখে না পড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবারও সক্রিয় হয়েছে গা ঢাকা দেওয়া এবং জেল ফেরত আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীরা। এমনই দাবী করে কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা জানায় কক্সবাজারকে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সমাধানে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলার আহব্বান সকলের।


কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, মিয়ানমার থেকে সহজেই মাদক আসে কক্সবাজারে। এটি সারাদেশসহ ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজারের বদনাম হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত প্রতিবাদ করা জরুরি।


কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মূখপাত্র এইচ এম নজরুল বলেন, দিবস আসলেই সবাই নড়েচড়ে বসেন এরপর আর কোন খবর থাকে না। সিমান্তে এতোগুলো মাদক জব্দ করে প্রশাসন কিন্তু কোন কারবারি ধরা পড়ে না। এমন বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত কারণ নতুন প্রজন্মের কাছে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সহজে। এটি রোধ করা সময়ের দাবী।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024