◾আসিফ আহমেদ : সর্বজনবিদিত বহুল পরিচিত একটা শব্দ মৃত্যু। যা আকারের দিক থেকে খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু তার মমার্থ ও ভাবার্থ যারপরনাই বিশাল এবং সুদূরপ্রসারী। মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে মানুষের দুর্নিবার রহস্য এবং কৌতূহল। মানুষের সমস্ত আবেগ,উৎকন্ঠা, চাহিদা, কামনা-বাসনার ইতি টেনে দেয় এই মৃত্যু। পার্থিব সকল সুখ এবং শখের রাজ্য জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এই মৃত্যু। নশ্বর এই ধরায় অবিনশ্বর হওয়াতেই যেন আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, টিকে থাকতে চাই হাজার বছর।


কিন্তু মৃত্যু আমাদের সেই মিথ্যা অবকাঠামোকে দুমড়েমুচড়ে লেপ্টে দেয় তার অমোঘ অস্ত্র দিয়ে,জানিয়ে দেয় তার ভয়াল থাবা কতটা বিষময়। দুনিয়ার নিকটস্থ কোনো শত্রু বা হিংস্র পশুর থেকে বাঁচতে আমরা কতটা উদগ্রীব হয়ে পড়ি, শশ্যব্যস্ত হয়ে খুঁজতে থাকি এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ। কিন্তু কখনো আমাদের এই ক্লান্ত নফস, অহংবাদী প্রবৃত্তি চিরন্তণ অমোঘ এই বাণীকে ক্ষণিকের জন্যও ভ্রুক্ষেপ করে না।


জগৎ সংসারে এমন কোনো জীবআত্মা,এমন কোনো জীব-অনুজীব নেয় যে মৃত্যুর ভয়ে তটস্থ থাকে না, মৃত্যুর ভয় তাকে তাড়া করে বেড়ায় না। আমাদের সকল শৌর্য-বীর্য, সক্ষমতা,অভিজ্ঞতা দূরদর্শিতা যেন মৃত্যু অবধি সীমাবদ্ধ। সবকিছুই জলাঞ্জলি দিতে আমরা প্রস্তুত, এমনকি স্বীয় অস্তিত্বের নিমিত্তে ধারালো তরবারির সম্মুখে দামী বিলকুল আওড়াতেও আমরা সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আমাদের সকল খায়েশ, সকল অভিপ্রায়কে পরোয়া না করে মৃত্যু ঠিকই শিউরে হাজির হয় তার নির্জলা ফাঁদ নিয়ে, আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ফেলে ক্লান্ত আত্মাকে, বুঝিয়ে দেয় তার কাছে আমরা কতটা পরাস্ত, বুঝিয়ে দেয় তার শক্তির পরিসীমা। 


মৃত্যু দারপ্রান্ত থেকে বেঁচে ফিরেছে এমন মানুষের নজির এই ধরায় নাই। বরং মৃত্যু তার মতো করে নিজ গতিতে চলমান, কারো কাছে মুহূর্তের জন্যও সে ধরা দেইনি, দিবেনা। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এরশাদ করেন, "অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা তরান্বিত করতে পারবে না।" ( সূরা নাহল, আয়াত ৬১)। বরং আমরা জীবনের সন্ধিক্ষণে এই চিরসত্যকেও ভুলতে বসেছি, তাকে পরোয়া না করে আমরা অবলোকন করেছি অশুভ প্রতিযোগিতার সাগরে এ যেন ঠিক ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার নামান্তর। 


মৃত্যু অবধারিত জেনেও আমাদের মন্থর হয়ে বসে থাকলে চলবে না, অবগাহন করা যাবে না অলসতার সাগরে। যে তরী ঘাটে ভিঁড়বেই, যে নাও বৈঠা ছাড়া চলতে নারাজ তার জন্য প্রস্তুতি না নেওয়া নির্বুদ্ধিতা ছাড়া বৈকি। এই ক্লান্ত আত্মা তো ঠিকই খড়গহস্ত হবে, রক্তমাংসের এই সুঠাম দেহের তো ঠিকই যবনিকাপাত ঘটবে, তারপরও আমাদের বিপদসংকুল সেই খেঁয়া পারাপারের নেপথ্যে পাথেয় গুছিয়ে নিতে হবে, কুঁড়িয়ে নিতে হবে জগৎ সংসারের উঠান থেকে সেই অমূল্য রতন। 


তিক্ত এই সত্যকে মেনে নিয়ে, অহংবোধকে ঘৃণা করে অপ্রতিরোধ্য হয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে সেই অমৃতের, যার অমীয় স্বাদ ধরিত্রীজুড়ে আমাদের বরণীয় করে তুলবে। জীবিত থেকে মৃত নয় বরং মৃত থেকে জীবিত এই মূলমন্ত্রে ভর করে স্বীয় সত্ত্বার উন্নতিতে নিবিষ্ট হতে হবে। 


যে অকুস্থল পূর্ব থেকে নির্ধারিত, অনাকাঙ্ক্ষিত যে আগমন ঠেকাতে আমরা সর্বদা অপারগ সেই দিনের শ্রেষ্ঠ কর্মবিধায়ক মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেন আমাদের সবাইকে নেক সুরতের সাথে মৃত্যু দেন। (আমিন) 


লেখক: আসিফ আহমেদ 

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024