◾দ্বীন মোহাম্মদ:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে ২০ থেকে ২২টির মতো সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে।


প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এই তথ্য জানান।


মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ৮ থেকে ১১ জুলাই চীন সফর করবেন। আগামীকাল সোমবার (৮ জুলাই) সকাল ১১টায় হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দিবেন, বেইজিংয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় পৌঁছাবেন।


ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই সফরে বাংলাদেশের উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হবে। চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। দেশটির সাথে স্ট্র‍্যাটেজিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সফর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে কীনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তিস্তা বিষয়ে চীন যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে আলোচনা হবে।


তিনি বলেন, তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশ, দুই দেশের যৌথ নদী। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এখন সেটি পর্যালোচনা করতেছি।চীন থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়া হবে কীনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এই সফরে চীনের সাথে ইকোনমিক কোঅপারেশন নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি হবে। এই উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে আলোচনা হবে।


এ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজনের নিরিখে এবং আমাদের প্যারামিটারগুলো পর্যালোচনা করে আমরা সহযোগিতা নেই। পদ্মাসেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর পুনরায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তা গ্রহণ করিনি।


চীনকে বাংলাদেশ অফসোর ব্যাংকিংয়ের প্রস্তাব দেবে কীনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অফসোর ব্যাংকিং ওপেন ফর অল। যে কোনো দেশ যদি চায়, আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকে চাইলে টাকা রাখতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ব্যাংকে অনেক দেশ টাকা রাখতে পারে। তবে অফসোর ব্যাংকিং কিছুটা ভিন্ন বিষয়।


মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে চীনের সাথে সমঝোতা হয়েছিল, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব চীনকে দেয়া হবে কীনা, এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে চীনের সাথে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। এই সফরে আশা করছি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হবে।


চীনের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি থেকে আমরা করছি বেশি, রপ্তানি কম হয়। আমরা পরিকল্পনা করছি আমাদের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে।


ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতারও পূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক চীন সফরের মাধ্যমে, যে সময় চীনের তৎকালীন নেতা মাও সে-তুং -এর সাথে জাতির জনকের সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন “আমার দেখা নয়াচীন” বইটি। চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে, যার ধারাবাহিকতায় দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান আছে। ২০১৬ সালে শি চিনপিং-এর ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক “কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব” -এ উন্নীত হয়। বিগত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হবার পর মানীয় প্রধানমন্ত্রী-কে চীনের পক্ষ হতে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়। চীন বাংদেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।


তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে। একই সাথে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন প্রদান করে যাবে।


মন্ত্রী বলেন, চীনের মাননীয় প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াং-এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮-১১ জুলাই চীনে সরকারি সফর করবেন।


প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে অর্থ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, অন্যান্য সচিববৃন্দ সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাগণ সফরসঙ্গী হবেন। 


প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সফরের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৮ জুলাই সকাল ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইট যোগে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন এবং একই দিন চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অভ্যর্থনা জানানো হবে।


০৩। আগামী ৯ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক -এর প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাং-গ্রি-লা সার্কেলে অনুষ্ঠেয় “Summit on Trade, Business and Investment Opportunities between Bangladesh and China” শীর্ষক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনটিতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ হতে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চীন সফর করবে। ওইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী Chinese People’s Political Consultative Conference (CPPCC) -এর ১৪ তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান Mr. Wang Huning -এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। রাতে তিনি বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।


১০ জুলাই সফরের তৃতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল -এ চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাতের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এর পর দুই দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০ থেকে ২২টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেয়া হবে। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ৬ষ্ঠ ও ৯ম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ হতে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পিপল টু পিপল কানেকটিভিটি প্রভৃতি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ব্যংকুয়েটের (ভোজের) মাধ্যমে গ্রেট হলে উল্লিখিত সাক্ষাতের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন হবে।


১০ জুলাই বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল -এ চীনের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শি চিনপিং -এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করবে।


১১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী চীন ত্যাগ করবেন এবং দুপুর ২টায় ঢাকা অবতরণ করবেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024