চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। এতে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে (৪৫)। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬ নম্বর মামলা এটি। তার বিরুদ্ধে  পেনাল কোড-১৮৬০-এর ধারা-১৪৩/১৪৭/১৪৮/ ১৪৯/৩০২/১০৯/৩৪-এ আসামিদের বিরুদ্ধে ‘একই এবং হুকুমে – জনতাবদ্ধে অস্ত্রে-শস্ত্রে উদ্দেশ্যে বেআইনী মারাত্মক সজ্জিত হইয়া আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করিয়া হত্যা করার অপরাধের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

১৭ আগষ্ট ( শনিবার)  নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার নলবিলা এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ পারভেজ (৩৬) বাদি হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় এই মামলা দায়ের করেছেন। এতে ৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিনজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন— চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক (৪৫), জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন (৫০) ও চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু (৪২)।
  চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী (৫০), চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী (৫৫), চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ (৩৮)। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি (৩৫), চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন (২৭), চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হোসাইন অভি (২৪), চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা মনির উদ্দিন (২৩), চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা জিয়াউদ্দীন আরমান (২৫) ও বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজান সিকদার (৩৫)। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ (৪৫), আওয়ামী লীগ কর্মী মো. জালাল ড্রিল জালাল (৪২), যুবলীগ কর্মী মো. ফরিদ (৪২), যুবলীগ কর্মী এইচ এম মিঠু (৪০), চান্দগাঁওয়ের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল (৪৫), চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. দেলোয়ার (৪০), চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ কর্মী মো. জাফর (৩৮),যুবলীগ নেতা বাঁশখালী শীলকূপের বাসিন্দা মো. শোয়াইব (৩৮), চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা মো. কাইসার (৪০) ও মাহবুব আলম (৪২)। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ (৩৫), কালামারছড়া এলাকার ওসমান গণির ছেলে নোমান শরীফ (৩৭), নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা (৪৮) ও আরিফ ইফতেকার রশিদ (৩২), ধলঘাট এলাকার শফিউল আলমের ছেলে ওসমান গণি (৫৫), আঁধারঘোনা এলাকার গোলাম শরীফের ছেলে মাইনুল ইসলাম শরীফ, শাহঘোনা এলাকার আবুল কাসেমের ছেলে জাফর আলম (৫৫), ইউনুসখালী এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে মনছুর আবেদীন (২৫), কালামারছড়া এলাকার ওবায়েদুল হকের ছেলে আবুল হাসনাত (৩৮), শাহঘোনা এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন (২৮) নাম উল্লেখ ৩৬ জনের, অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জন জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় , নিহত তানভির ১৮ জুলাই  মিছিল সহকারে চান্দগাঁওয়ের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর অবস্থান করছিলেন। বিকেল আনুমানিক ৪টা ২০ মিনিটের দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ১ নম্বর আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ২ নম্বর আসামি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশ ও হুকুমে নাম উল্লেখ করা ৩১ জন আসামি ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জন ধারালো চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের দিকে ইটপাথর নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এর একপর্যায়ে তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) গুলিবিদ্ধ হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তানভীর ছিদ্দিকীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানভীরকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024