|
Date: 2024-08-19 01:38:34 |
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে। তবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা সংস্থা ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পর।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে স্থানীয় একটি হোটেলে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মিশন প্রধান ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৮ আগস্ট সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিন পর বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের জন্য এ আয়োজন করা হয়। এ ব্রিফিংয়ে প্রায় ৫০ জন কূটনীতিক যোগ দেন।
ব্রিফিংয়ের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। ব্রিফিংয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সবক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।
প্রধান উপদেষ্টা তার ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুদের মধ্যে থাকতে পেরে আনন্দিত। দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল লাখো বীর ছাত্র-জনতা। কিন্তু তার (শেখ হাসিনা) দলের ছাত্র সংগঠন ও শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দেশে ভয়াবহতম বেসামরিক গণহত্যা করার পর তিনি (শেখ হাসিনা) দেশ ছাড়েন।
মুহাম্মদ ড. ইউনূস বলেন, আমি সেইসব বীর ছাত্র এবং নিরীহ মানুষদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, যারা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের সাম্প্রতিক স্মৃতিতে অন্য কোনো দেশের ছাত্রদের তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য এত মূল্য দিতে হয়নি; যেখানে একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশবান্ধব একটি দেশের স্বপ্ন দেখতে হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্বভার নিয়েছি, যেখানে অনেক দিক থেকেই পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের নির্মম নৃশংসতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকারের চর্চা না করেই বেড়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট হয়েছে। আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুণ্ঠন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ নিয়ে ছাত্রদের একটি স্বপ্ন আমাদের মুগ্ধ করেছে, যে স্বপ্ন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। তিনি বলেন, ছাত্ররা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে মানুষ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে, নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে।
© Deshchitro 2024