সাতক্ষীরার কুখরালী আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অবৈধভাবে ৫টি নিয়োগে ৭৬ লক্ষ টাকা দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান খোকনের বিরুদ্ধে। তবে এবিষয়ে কিছুই জানেন না অত্র মাদ্রাসার সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। এই মর্মে মাদ্রাসার প্যাডে লিখিত দিয়েছেন।

এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, সাতক্ষীরা সদর ২ আসনের সাবেক আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এমপি রবির যোগসাজসে গুন্ডা বাহিনী দ্বারা মানুষকে প্রভাবিত করে মাদ্রাসার সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন মোঃ আসাদুজ্জামান খোকন। সভাপতির পদ পাওয়ার পর একের পর এক দূর্নীতি করতে থাকেন মোঃ আসাদুজ্জামান খোকন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে এবং এমপি রবির ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি খোকনের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅর্ভরথনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে খোকনের অনিয়ম ও দূর্নীতির থলের বিড়াল।

মোঃ আসাদুজ্জামান খোকন কুখরালী ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক পৌর আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলামের পুত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুখরালী আহমাদীয়া দাখিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, মাদ্রাসার সভাপতি খোকন কাউকে কিছু না জানিয়ে তার ভাবিসহ ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। তাহারা যেদিন প্রথম মাদ্রাসায় এসেছে সেদিন আমরা জানতে পারি তাদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়েছে। এবিষয়ে আমরা সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সাতক্ষীরার সাবেক এমপি রবি তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছে অথচ পরে জানতে পারলাম খোকন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সহ-সুপারসহ ৭৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পদে ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন।

কুখরালী এলাকার বাসিন্দা মোঃ শরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি খোকন চুরি করে অবৈধ ভাবে ৫টি নিয়োগ দিয়েছেন। তার মধ্যে একাধিক ব্যাক্তি উক্ত পদের জন্য অযোগ্য যারা মেধাবী তাদের কোন প্রকার চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ দেননি। কেউ আবেদন পত্র নিয়ে গেলে আবেদন পত্র জমাও হয়নি। মাদ্রাসায় বিভিন্ন পদে নিয়োগের টাকা দিয়ে ৩৩ লক্ষ টাকা দিয়ে জমিও কিনেছেন খোকন। তাছাড়াও গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকার মালিকও বনে গেছেন তিনি।

কুখরালী এলাকার  মোঃ ইয়াছিন আরাফাত বলেন, খোকনের বাপ শহিদুল মানুষের ঘের দখল থেকে শুরু করে জমি দখল করে আসছে। আর ওর ছেলে খোকন তার থেকেও বড় বাটপার। আওয়ামীলীগের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এবং সাবেক এক সংসদ সদস্যের মোটা অংকের টাকা দিয়ে সভাপতি হয়েছেন। সেই টাকা তোলার জন্য ৭৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৫ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তার মধ্যে আয়া পদে ভাবি কোটায় নিয়োগ দিয়েছেন খোকন।

আয়া পদে চাকরী প্রত্যাশী ছিলেন কুখরালী এলাকার  মোছাঃ বিলকিছ সুলতানা তিনি বলেন, আমি কুখরালী আহমাদীয়া দাখিল মাদ্রাসায় আয়া পদে প্রার্থী ছিলাম। কবে নিয়োগ হলো সেটিও আমি জানতে পারি নাই। এ অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও মাদ্রাসার সভাপতি খোকনের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানায়।

নিরাপত্তা কর্মী পদে চাকরীর আবেদনকারী মোঃ নাজমুল হুদা জানান, আমি একজন নিরাপত্তা কর্মী পদে চাকরি প্রত্যাশী ছিলাম। কখন নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে অবৈধভাবে নিরপত্তা কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন শুধু আমি কেন এলাকার কোন মানুষ জানে না। পরে জানতে চাইলে আমাকে বলেন এসব পদে নিয়োগ হয়ে গেছে। আমাদের দরখাস্ত বাতিল হয়ে গেছে।

এদিকে গত ২১ আগস্ট কুখারালী আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত প্রতিষ্ঠানের প্যাডে মাদ্রাসার সুপার বলেন, মোঃ হাসিব, সহ-সুপার, মোঃ মেহেদী ট্রেড সহকারী (ইলেকট্রিক্যাল), মোঃ ফয়সাল ট্রেড সহকারী (কম্পিউটার), মোঃ আব্দুর রহমান নিরাপত্তা কর্মী, ইয়াসমিন আরা, আয়া পদে কর্মচারী নিয়োগ কালীন তাহাদের নিকট হতে কত টাকা লেনদেন করা হয়েছে এই মর্মে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান খোকন অবগত আছেন। এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে অত্র বর্ণনা আমি স্বেচ্ছায় প্রদান করিলাম।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোঃ আসাদুজ্জামান খোকনের ব্যবহৃত মোবাইলে ফোনে একাধিকবার ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার বক্তব্য জানতে তার বাসায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানান, খোকন ভয়ে পলাতক আছেন এবং আওয়ামীলীগ ছত্রছায়ায় থাকার পর এখন জামায়ত এবং বিএনপি নেতাদের ছায়ায় থাকার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। 


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024