|
Date: 2024-09-01 02:22:14 |
বরকতুল্লাহ আবরার
বাংলাদেশের রাজনীতির গতি - প্রকৃতি কখন কোন দিকে মোড় নেয়, কী রূপ ধারণ করে তা বুঝা বড় দায়। যদিও গণমাধ্যমে রাজনীতি নিয়ে কথা চলে হর হামেশা, তবুও তার নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার!
কারণ, বাংলাদেশের রাজনীতিতেও নাকি ষড়ঋতুর উপস্থিতি ঢের আন্দাজ করেন বিশেষজ্ঞরা।
এই যেমন জুলাই-আগস্ট বিপ্লব কে অনেকেই বাংলাদেশের রাজনীতির শরৎকাল মনে করেন,যে কালে শোকের অশ্রু এবং বিজয়ের হাসি একত্রিত হয়েছে।ঝরে পড়েছে দীর্ঘ সময় ধরে দেশ ও জাতির রক্তচোষা কাল নাগিনী (!)। মুক্তি পেয়েছে জাতি, ছুড়ে ফেলে দিয়েছে সমস্ত গ্লানি আর হেসেছে বিজয়ের হাসি তাইতো আগস্টকে অনেকেই শোকের মাস বলতে নারাজ।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে "কেমন বাংলাদেশ চাই" শীর্ষক শিরোনামে প্রায় ডজনখানেক সেমিনার হয়েছে বাংলাদেশে। প্রত্যেকটি সেমিনারেই বক্তাগণ তাদের নিজস্ব চিন্তা,চেতনা আর আদর্শকে সামনে রেখেই একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছেন।
"কেমন বাংলাদেশ চাই বা "যেমন বাংলাদেশ চাই" শীর্ষক শিরোনামের সেমিনার থেকে যে সমস্ত দাবি ওঠে এসেছে তা নিম্নরূপ :
যেমন বাংলাদেশ চাই:
সরকারি অফিস-আদালত ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় প্রভাব মুক্ত থাকবে।
সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু মত প্রকাশের নামে কারো আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত করা হবে না।
ভিন্ন মতের কারণে কেউ গুম, খুন বা হয়রানির শিকার হবে না।
আয়না ঘরের মতো অভিশপ্ত কোনো নির্যাতন কেন্দ্র থাকবে না।
সরকারি সেবা পেতে কারো মাধ্যম বা টেলিফোনের প্রয়োজন হবে না।
আইন ও নীতি প্রণয়নে দেশের মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটবে।
বিচারকার্যে কেউ অন্যায় হস্তক্ষেপ করবে না এবং সবাই ন্যায়বিচার পাবে।
বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের সর্বোচ্চ আস্থা তৈরি হবে।
আইনের শাসন থাকবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ও পাঠ্য পুস্তকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও সামাজিক মূল্যবোধের রিফ্লেকশন হবে।
শিক্ষার নামে কারো ওপর তার ধর্ম ও বিশ্বাস বিরোধী কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
দেশের মানুষের বিশ্বাস ও চেতনা পরিপন্থী বিষয় এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি আমদানী করা হবে না।
প্রবাসীদের প্রতি হয়রানি বন্ধ হবে এবং দেশের সকল সেবায় তাদের জন্য বিশেষ প্রায়োরিটি থাকবে।
বেকারত্ব দূরীকরণে তরুণদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে উদ্যোক্ত হওয়ার পথ সুগম হবে।
বিনোদন ও সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা বন্ধ হবে।
দাড়ি, টুপি, হিজাব ও ইসলামপন্থীদের প্রতি বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরণ দূর হবে।
সংখ্যালঘুরা নিপীড়িত হবে না।
ইসলামপন্থীদের প্রতি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য দূর হবে।
ইমাম-খতীবদের হক কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে।
সকল নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি হবে কেবল মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে।
দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
অধিক মুনাফাখোরী ও মজুতদারী থাকবে না।
নিরাপদ খাদ্য, পানীয় এবং ওষুধ নিশ্চিত হবে।
চিকিৎসার মান উন্নত ও আস্থাশীল হবে।
ছাত্র সংসদ ছাড়া শিক্ষাঙ্গনে লেজুড়বৃত্তিমূলক ছাত্র রাজনীতি থাকবে না।
দুর্নীতি, অনিয়ম এবং খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণের শাস্তি হবে সবচেয়ে কঠোর।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অপসংস্কৃতি থাকবে না।
পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার চাঁদাবাজি, নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট দূর হবে।
ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম কমে যাবে।
যত্রতত্র বাস স্টপেজ এবং বাস-ট্রাক পার্কিং বন্ধ হবে।
কৃষক তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবে।
শ্রমিকের প্রতি কোনো অবিচার হবে না।
সব ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণা বন্ধ হবে।
গুণ্ডামি ও পেশি শক্তির প্রদর্শনী দেখতে হবে না।
চাটুকারিতার উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে পরিবেশ দূষিত করা হবে না
মূলত বিগত ১৬ বছরের তোষণ - শোষণের রাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া প্রতিটি নাগরিকেরই দাবি এটি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ দাবি আদায়ের পথে হাঁটলে, প্রতিটি নাগরিকের মুখে ফুটে থাকা সেই বিজয়ের হাসি অক্ষুন্ন থাকবে।
© Deshchitro 2024