মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান গৃহযুদ্ধে জীবন বাঁচাতে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার সাধারন রোহিঙ্গা। এসময় রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পাড়ি দিতে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নেয় দালালরা। রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় তাদের শেষ সম্বল যা থাকে তা নিয়ে চলে আসেন, সেই সুযোগে দালালরা নৌকায় থাকা অবস্থায় রোহিঙ্গাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার লুট করে নেন এবং কান্না কাঠি করলে নৌকা ডুবিয়ে দেন বলে জানান রোহিঙ্গা নারী ইসমতারা এবং দিলদার মিয়া।


ইতিমধ্যে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে লুট হওয়া টাকা, স্বর্ণালংকার, ভাগাভাগি সহ বিচার সালিশে বসতে দেখা যায়।



গত আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ কালে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা স্বর্ণা অলংকার লুট করে নিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে অনন্ত ৫০ জনের অধিক রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানান।


দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা রিদুয়ান (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা বলেন,আমরা মংডুর বাসিন্দা, সেখানে অনেক নির্যাতন চলছে। খাবার,চিকিৎসাসহ সবকিছু অভাবে পড়েছি। পরে বাংলাদেশে থাকা আমাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলে প্রাণ বাঁচাতে মাথাপিছু ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমরা ৮জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। এখন ২২ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছি।


সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে,মিয়ানমারের রাখাইন দখল নিতে আরাকান আর্মি দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন।সে সঙ্গে এ লড়াইয়ে আরও কিছু বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে।আরাকান আর্মি গত ৬ মাস যুদ্ধে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল ও দেশটির সেনা ও বিজিপি’র ক্যাম্প, চৌকি দখলের পরে মংডু শহর দখল নিতে এখন তীব্র হামলা চালাচ্ছেন।অপরদিকে সরকারি বাহিনীও মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে।এ সংঘাতের জেরে মংডু সহ আশপাশের গ্রামে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের প্রাণ হানি ঘটছে। প্রাণ বাঁচাতে নতুন করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নৌকা করে নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এসব রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছে টেকনাফের স্থানীয় কিছু দালাল চক্র।



টেকনাফ সীমান্তের রোহিঙ্গা ঢুকার পয়েন্ট হচ্ছে জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলির ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে দেওয়ার পরে রোহিঙ্গারা অনেকেই উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে পরিচিত আত্মীয় স্বজন সহ টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন।


টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরি বলেন,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা কাজ করছেন এবং অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছেন। তবে টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের পরে যে সব লোক রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিয়েছে বা দিতেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024