যেখানে খেলা করতাম, ঘুমাতাম। সেখানে সবকিছু এখন পানিতে তলিয়ে ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের থাকার যে আর কোন জায়গা থাকল না। এখন আমরা কোথায় থাকবো? এভাবে নিজ শখের বাড়ি হারানোর শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার শিশু মারিয়াম খাতুন। আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসীসহ পরিবারের সদস্যদের সমবেদনাও তার কান্না থামাতে পারছেনা৷

চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্য ভাবাচ্ছে ছোট শিশু মারিয়ামকে। আবেগ ঝরানো মুখে নানান প্রশ্ন তার! এখন ছোট্ট ভাই বাবা মা’কে নিয়ে কোথায় থাকবে সে? শিশুর এমন আর্তনাদ ও কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বদ্দিপাড়া গাঁ। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসলেও অশ্রুসিক্ত হতে হয়েছে সকলকে।

মারিয়াম কলারোয়া উপজেলার দিগং গ্রামের বদ্দিপাড়া এলাকার রানা হোসেনের মেয়ে।

জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে গত সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে ধ্বসে পড়ে মারিয়ামদের বাড়ি। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। মাটির তৈরি টালি গুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। ইট আর সিমেন্টের গাঁথুনি দেয়া দেয়াল ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে রয়েছে। কোনোভাবেই এই ঘরটি বসবাস করা উপযোগী নয়। ভেঙ্গে যাওয়া এই ঘরের লোনের টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি। এসকল দুশ্চিন্তায় মারিয়ামের বাবা রানাসহ তার মা।

মারিয়ামের বাবা রানা হোসেন জানান, গত ছয় মাস আগে বাড়ির গাঁথুনির কাজ শেষ হয়েছে। এখনো লোনের টাকা পরিশোধ হয়নি। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে তার ঘেরের ৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতেকরে আরেকটি ঘর বানানোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা নেই। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বলে জানান তিনি।

মারিয়ামের মা সোনিয়া খাতুন বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে দিগংসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটা গ্রামের পানির চাপে গত সোমবার তার বসতবাড়ির রাস্তার মধ্যখান দিয়ে ভেঙ্গে বাড়ির নিচে অনেক গর্ত হয়ে যায়। আর সেখানেই ধ্বসে পড়ে ভেঙে চুরমার হয় সবকিছু।

সোনিয়া জানান, বসত বাড়ি হারানোর পর থেকে স্বামীসহ দুই সন্তান নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। সহৃদয়বান মানুষ সকলে যদি সহযোগিতা করে তাহলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতাম। নাহলে অনেক দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হবে আমাদের।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটা অল্প ভাঙ্গা থাকাকালীন সময়ে সংস্কারের জন্য মিস্ত্রি নিয়ে কাজ শুরু করলে সেই মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সংস্কার কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তাটা ভেঙে গেছে এবং মারিয়ামদের বাড়িটাও ধ্বসে নষ্ট হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করা হবে। তবে এক্ষেত্রে সমাজের মানবিক ব্যক্তিরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়াতেন তাহলে মারিয়ামদের জন্য একটা ঘর নির্মাণ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024