কক্সবাজারের  কুতুবদিয়ায় বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নেয়ামুলহক বাপ্পির  অভিযোগ ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তাকে চলমান দায়িত্ব থেকে সরাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সদ্য বিদায়ী ইউএনও মইনুল হোসেন চৌধুরী রাতারাতি এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইউএনও কুতুবদিয়াকে পেকুয়া উপজেলায় বদলির আদেশ হয়। বদলি আদেশের পর কুতুবদিয়া বিয়াম স্কুলের জন্য ১জন অধ্যক্ষ ও ১জন সহকারী শিক্ষক চেয়ে কুতুবদিয়া ইউএনও স্বাক্ষরিত ৮ সেপ্টেম্বরের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থানীয় বা জাতীয় কোন পত্রিকায় প্রকাশ না করে ১০ সেপ্টেম্বর একটি  পেইজ বুক পেইজে প্রচার করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করে সেদিনই পছন্দের একজনকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ আমি চলমান দায়িত্বে আছি নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। নিয়োগ পরীক্ষার দিন স্কুলে দ্বিতীয় সাময়িক সাময়িক পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালীন ইউএনও অফিসের সিএ বিশ্বজিৎ আমাকে একপ্রকার স্কুল থেকে ধরে নিয়ে যান পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য। না গেলে হয়রানি মূলক মামলার ভয় দেখান। তাই আমি যেতে বাধ্য হই। পরীক্ষার জন্য আমার কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। অথচ আমি ২০১৯ সালে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে স্মারক নং-বিঃল্যাবঃ/কুতুব/নিয়োগ /২০১৯/২৮ মূলে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হই। দীর্ঘ পাঁচবছর স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে কাজে বিদ্যালয়কে বর্তমান অবস্থানে এনেছি। চাকরি শর্তে উল্লেখ ছিল চাকরির ১ম চার মাস শিক্ষানবিশ কাল শেষে সন্তোষজনক আচরণ ও দক্ষতা সাপেক্ষে স্থায়ী নিয়োগ করা হবে। গত ২০/০৬/২০২৪ ইংরেজি তারিখ  সদ্য বিদায়ী ইউএনও মইনুল হোসেন চৌধুরী আমার স্কুল পরিদর্শন করেন। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করে পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করেন। সেই তিনিই আমাকে সরাতে পদাধিকারবলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নতুন অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলেন। আমি এই অনিয়মের প্রতিবাদ করছি এবং  ন্যায় বিচার চাই।

বিয়াম ফাউন্ডেশন ঢাকা, পরিচালক (শিক্ষা) মুহাম্মদ হিরুজ্জামান এনডিসি স্বাক্ষরিত ২০২৩ সালের ০৫.০৫.০০০০.০০৪.০৬.০৩৮.২৩-৩৮৫ নং স্মারকে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে চাহিদা প্রেরণ সংক্রান্ত একটি পত্রে দেখা যায়  বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ৪৪ টি শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে চাহিদাপত্র মতে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে বিয়াম ফাউন্ডেশন ঢাকা হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। 

বৃহস্পতিবার সকালে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে দিতে গেলে হৈচৈ পড়ে যায়। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আগের অধ্যক্ষকে স্কুলে ফেরানোর জন্য মানববন্ধন করার চেষ্টা করে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ'র অভিভাবক প্রতিনিধি নাছির উদ্দীন বলেন, নতুন অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আমরা কিছু জানতাম না। তাই মূলত অধ্যক্ষের চেয়ারে নতুন একজনকে দেখে  হৈচৈ শুরু করেন অভিভাবকরা। একপর্যায়ে নতুন অধ্যক্ষ আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এসময় বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মইনুল হোসেন আমাকে ধমকানোর চেষ্টা করেন। যে কারনে আমি সন্তানকে বিদ্যালয় থেকে নিয়ে আসার জন্য ছাড়পত্র দিতে বলি।

একই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া নুরশানুল হক বলেন, নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে।  অধ্যক্ষ পদে আবেদনকারী ছিল দুইজন। সহকারী শিক্ষক পদে চারজন। কিন্তু রেজাল্ট দেখি সাতজনের। তাছাড়া সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারী একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অধ্যক্ষ পদে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে আমি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি। আগের বিষয়াদি আমি কিছুই জানি না। 

এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি। ৫০  মার্কের লিখিত পরীক্ষা ছিল । দুইজন প্রার্থীর একজন ১৮ এবং অন্যজন ১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আগের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর বিষয় বিষয়ে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত)কে ডেকে এনে আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি চতুর্থ হয়েছেন।এতে,

শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে আরও তিনজন কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁরা হলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, কৃষি অফিসার ও কুতুবদিয়া  সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিনিধি।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024