|
Date: 2022-11-13 12:06:28 |
২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক থেকে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাশাপাশি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরও ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশার কথা জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
রবিবার সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার এবং নবনিযুক্ত বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেকের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা ২০১৯ থেকে এপ্রিল ২০২২ সময়ে ১ বিলিয়ন বাজেট সহায়তা পেয়েছি। চলতি অর্থ বছরে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর ও পরবর্তী বছরে গ্রিন রেসিলেন্স ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট থেকে ২৫০ মিলিয়ন করে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে।'
পাশাপাশি ২০২৩-২০২৫ সাল মেয়াদে ৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব পাইপলাইনে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আড়াই বছরের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। ওলোটপালট হয়েছে অনেক হিসাব-নিকাশ। বাংলাদেশেও যার প্রভাব পড়েছে। আমদানি বাড়ায় এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমায় বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ কমছেই; বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি বাড়ছে।
এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ আইএমএফের পাশাপাশি বাজেট সহায়তা হিসাবে গত জুলাইয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চেয়েছিল। এই ঋণ নিয়ে গত মধ্য অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সংস্থা দুটির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে রোববারের দ্বিপক্ষীয় সভায় বিশ্বব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন।
অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংক হতে ১৯৭২ সাল থেকে আমরা এযাবৎ ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও অনুদান সহায়তা পেয়েছি, যার মধ্যে ২৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করা হয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত সুদ ও আসল মিলে ৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি। বিশ্বব্যাংক ২০২৩-২০২৭ অর্থবছরের জন্য কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক (সিপিএফ) প্রস্তুত করছে। অর্থমন্ত্রী ভাইস প্রেসিডেন্টকে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান এবং অন্যান্য সরকারি মহাপরিকল্পনা, সেক্টরাল প্ল্যান এবং নীতিগুলির সঙ্গে সিপিএফকে অ্যালাইন করার জন্য অনুরোধ করেন।
পরিবেশগত পুনরুদ্ধার এবং ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলির নাব্যতা নিশ্চিত এবং ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য গৃহীত ‘বিউটিফিকেশন অব ঢাকা’ নামে একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করার জন্য অর্থমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন।
আইডিএ দেশগুলির অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে আইডিএ ২০ খুব সহায়ক হবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আইডিএ ২০ সাইকেলকে স্বাগত জানান। তিনি কোভিড এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ উদ্ভুত বিরূপ পরিস্থিতি হতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের জন্য নমনীয় আইডিএ তহবিল থেকে বর্ধিত সহায়তার অনুরোধ করেন।
এই দ্বিপক্ষীয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান প্রমুখ।
© Deshchitro 2024