মো.আজিজুলহক আজিজ,কুতুবদিয়া,ডিপ্লোমা মেডিসিন সাইন্স(DMS)

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই আশংকাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ সময় খানিকটা সচেতনতাই পারে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত ভোরবেলা ও সন্ধ্যার পূর্বে কামড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায়, তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে পারে। বর্ষার সময় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা যায়।

ডেঙ্গুজ্বরের  লক্ষণ:

তিনটি ভাগে এই রোগের লক্ষণকে ভাগ করা যেতে পারে। এসিমটোমেটিভ অর্থ্যাৎ কোন লক্ষণ ছাড়াই ডেঙ্গু হয়ে গেছে। আপনি টেরও পাননি। মাইল্ড সিমটম বা ফ্লু লাইক সিমটম। এতে মনে হবে জ্বর জ্বর, সর্দি কাশি, প্রচণ্ড ব্যথা, ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে। লিম্পনোট ফুলে যাওয়া, গ্ল্যান্ট ফুলে যাওয়া, গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা, স্কিনে র‍্যাশ হতে পারে। ব্রুজ হতে পারে। চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণও হতে পারে। আর সিরিয়াস লক্ষণের মধ্যে যেটা রয়েছে, সেটা হেমোরেজিক ফিবার। অর্থ্যাৎ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হবে। নাক দিয়ে রক্ত, গলা দিয়ে রক্ত, কাশির সাথে রক্ত, পায়খানার সাথে রক্ত যাবে। জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, যেখানে পানি চলে আসবে। এটাকে আমরা বলি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিবার। আরেক ধরণের লক্ষণ, ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম। অর্থ্যাৎ শরীর থেকে এতটাই পানি চলে গেছে, ব্লাড প্রেসার আর ধরে রাখতে পারেনি শরীর। আইসিইউতে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে তখন। এই লক্ষণগুলো দেখলে সাবধান হতে হবে। দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

মেডিকেলের ভাষায় ডেঙ্গুর তিনটি পর্যায় রয়েছে। ফেব্রায়েল ফেজ। প্রথম পর্যায়। শরীরে ব্যথা। পরের ধাপটি হচ্ছে ক্রিটিক্যাল ফেজ। যেমন ধরা যাক রক্তক্ষরণ, ক্যাপিলারে লিক হচ্ছে, ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া। লাস্ট স্টেজ হচ্ছে ডেফারওয়েজ (??) মানে সব চলে গেছে,  এখন রোগটি থেকে সেরে ওঠার পালা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় :

পানিতে গাছ লাগান অনেকে, সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন দিন পর পর অবশ্যই পানি বদলে দেবেন।

টবের ভাঙা অংশ বা টবে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। 

অ্যাকুয়ারিয়াম বা চৌবাচ্চা থাকলে তিন দিনে একবার পানি বদলে দিতে হবে।ঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ময়লা আবর্জনা যেন জমে না থাকে।

ফ্রিজের পানির ট্রে নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এসির পানি যেন জমে না থাকে কোথাও।চিপসের প্যাকেট বা পানির বোতল যত্রতত্র ফেলবেন না। এগুলোতে পানি জমে মশা বাড়তে পারে। হঠাৎ বৃষ্টিতে পানি জমতে পারে এমন কিছু যেন বাড়ির আশেপাশে বা বারান্দায় না থাকে।

 ঘরে যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। অব্যবহৃত বাথরুমের কমোডও এডিস মশার লার্ভা উৎপাদনের জায়গা হতে পারে। তাই দুই বা তিন দিন পর পর ফ্ল্যাশ করে দিন কমোড। বাথরুমের বালতি, মগ বা বদনাতেও পানি জমিয়ে রাখবেন না। 

এডিস মশা সক্রিয় হয়ে ওঠে ভোরের আলো ফোটার সময় এবং দিনের শেষাংশে। এই দুই সময় তাই অবশ্যই জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হবে। 

দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন প্রয়োজনে।বাড়ির আনাচে কানাচে মশার স্প্রে ছিটান।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঘরে থাকলে সবসময় তাকে মশারির মধ্যে রাখুন।

জ্বর আসলে দেরি না করে অথবা নিজ থেকে অ্যান্টি-বায়োটিক না সেবন না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগে ডেংগু শনাক্তের জন্য ডেংগু এন এস-১ এন্টিজেন টেস্ট করা হয়, টেস্ট ফি  ৫০/- মাত্র।এছাড়া ডেংগু সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ডেঙ্গু হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন দ্রুত।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024