|
Date: 2024-10-06 17:52:33 |
যাচ্ছিলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলা থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মরাজপুর বাজারে। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করি। সাতক্ষীরা শহরের পৌর দিঘির পাড় থেকে আশাশুনি লাইনের বাস ধরে যাই-আসি। পৌর দিঘি থেকে বাস ছাড়ার পর থামে নবারুণ মোড়ে। সেখানে যাত্রীর আশায় অন্তত ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে বাস। তারপর আবার উপজেলা পরিষদ পার হয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির মোড়ে থামে। এখানে ২/৩ মিনিট থেমে কলেজ মোড়ে থামে। সেখানেও ২/৩ মিনিট থামার পর পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলা পার হয়ে মায়েরবাড়ির (সেকেন্ড অফিসারের মোড়) মোড়ে রাখে আরও ২/৩ মিনিট। এভাবে রাখারাখিতে দিঘির পাড় থেকে পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় পার হয় প্রায় ২০ মিনিট। বিষয়টি যারা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা ভালো জানেন।
প্রতিদিনের ন্যায় রবিবারও আশাশুনি লাইনের বাসে উঠে ব্রহ্মরাজপুর যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় দেখলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর পানিতে নিমজ্জিত। তারপর দেখলাম জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে পানি ঢুকছে। জেলা নির্বাচন অফিসের বারান্দা বরাবর পানি ঢেউ খেলছে। একটু সামনে এগুতে দেখলাম জেলা খাদ্য গুদামের মধ্যে পানির তুফান। চেয়ারম্যান বাড়ির মোড়ের কাছে দেখলাম রাস্তার পাশের কবরস্থানটি পানিতে ডুবে রয়েছে। তারপর আলিয়া মাদ্রাসা পার হয়ে যেই ফিরেছি বায় দেখি ঘরে পানি, উঠোনে পানি, রাস্তায় পানি। শুধু পানি আর পানি। আলিয়া মাদ্রাসা পেরিয়ে বাস চলে এলো ঘুড্ডিরডাঙি। বাসের জানালা দিয়ে যদ্দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। সেখানে বসবাসরত নারী-শিশুদের দেখি পানি পার হতে। পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। বাড়ির আঙিনায় বিচুলিগাদাও ডুবে রয়েছে পানিতে।
তারপর এলাম রামচন্দ্রপুর। সেখানেও পানি। রাস্তার পূর্ব পাশে রামচন্দ্রপুর বিলটি বর্তমানে সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে থাকায় এ বিলে আর আমন ধান হয় না। এভাবে দহাকুলা পর্যন্ত পানি আর পানি। দহাকুলা ভাটার মোড় ঘুরতেই ডানপাশে কচুয়ার বিল। এ বিলটি পানিতে থৈথৈ করছে। এ বিলেও আর আমন চাষ হয় না। আমন চাষের আশায় অনেকে বীজতলায় ধানের চারাও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সে চারা কাজে লাগেনি। বীজতলার নমুনা এখনও বিলকোলাচে আলামত হিসেবে রয়েছে। ব্রহ্মরাজপুর থেকে সাতক্ষীরা ফিরে আসার পথে রাস্তার পশ্চিম পাশে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ফায়ার সার্ভিস অফিসকেও ছাড়েনি পানি। সেখানেও জলতরঙ্গ খেলছে।
প্রতিদিন এভাবে পথে যেতে যেতে দেখি পানি। দেখি পানির সাথে হাজারো মানুষের বসবাস। দেখি শত মানুষের দুর্ভোগ। দেখি পানিবন্ধি মানুষের চরম দুর্ভোগ। দেখি ফসলশূন্য মাঠে পানির তুফান। বাসের জানালা দিয়ে দেখা সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতার সামান্য নমুনা, ভিতরের চিত্র না জানি আরও কত ভয়াবহ!
© Deshchitro 2024