|
Date: 2024-10-25 02:06:20 |
বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিসর বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য কমানোর দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-সাতক্ষীরা জেলা শাখার এর পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১০০০ এর অধিক নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং নাগরিক প্রতিনিধিদের সম্মিলিত জোট ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ যাত্রা শুরুর পর থেকে খাদ্য অধিকার, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, নিরাপদ খাদ্য, কৃষি, ভূমি, পানি ইত্যাদিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন এবং নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে পলিসি এডভোকেসিসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে দেশব্যাপী ১৬-২৭ অক্টোবর ২০২৪ ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস প্রচারাভিযান’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নেটওয়ার্কের ক্যাম্পেইন কাজের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিবসটির উদ্দেশ্য হলো-খাদ্য সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়ানো ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সকলের জন্য পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তায় গুরুত্ব প্রদান। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য খাদ্যের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, জীবনের জন্য খাদ্য অপরিহার্য। খাদ্যের অধিকার শুধু মৌলিক অধিকার হিসাবে নয় বরং স্বাস্থ্যকর ও উন্নত জীবন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানুষের পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যে অভিগম্যতা অনেকখানি এগিয়ে নেয়া সম্ভব। যা সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমতা আনয়ন ও খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা; দারিদ্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, টেকসই কৃষি ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ জাতীয় ও বৈশি^ক খাদ্য পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়তা করবে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক মানবাধিকার। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২৫/১ ধারায় প্রত্যেক মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করা হয়। জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণার প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে খাদ্য অধিকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’ এবং ১৮(১) ‘উল্লেখ করা হয় জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন’। রয়েছে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি, ২০২০। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্তৃক খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন জরিপে দেখা যায়, দেশে মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের ৫ লাখের মতো মানুষকে চরম দারিদ্র্যের পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তায় প্রাপ্যতা, অভিগম্যতা, ব্যবহার এবং স্থিতিশীলতা খাদ্য অধিকারের ধারণাগত এবং আইনগতভাবে জোরালো ভুমিকা রাখার প্রস্তাব আসলেও গত এক দশকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মধ্যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়েছে, অনেকেই খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তথ্যমতে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার প্রথম দিকে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও আগস্ট মাসে দেশের নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৮ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিল। ‘র্যাপিড মার্কেট মনিটর’ শিরোনামে ডব্লিউএফপি’র গবেষণায় উঠে এসেছে, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১৪.০১ শতাংশে ছিল।
© Deshchitro 2024