|
Date: 2024-10-27 03:54:50 |
বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপায় এবং পরবর্তীতে বাজারে ছাড়ে।এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মার্কেটে টুলস ব্যবহার করেন,যে কি পরিমাণ নতুন টাকা প্রয়োজন হবে। সেই পরিমাণ টাকাই ছাপানো হয়। আর ইচ্ছেমতো টাকা ছাপালে বাজারে অর্থের প্রভাব বেড়ে যাবে। ফলে মূদ্রাস্ফীতি বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়িয়ে দিবে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, বাজার এবং মূদ্রাস্ফীতি রক্ষা করে কীভাবে টাকা ছাপানো যায়?
বাজার নির্ভর করে দ্রব্য, ক্রেতা-বিক্রেতা এবং দামের উপর । দ্রব্য যত উৎপাদন করা হবে, সে অনুযায়ী দ্রব্যের চাহিদা যত বাড়বে, অর্থের ততই প্রয়োজন হবে। সুতরাং নতুন টাকা ছাপানো নির্ভর করবে একটি দেশ চাহিদা অনুযায়ী কতটুকু উৎপাদন করতে পারবে তার উপর।
দেশে সরকারি চাকরির ৪টি শ্রেণি রয়েছে। ৪টি শ্রেণিতেই পর্যায়ক্রমে দেশের উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবি কর্মকর্তারাই নিয়োগ আছেন। যারা সর্বোচ্চ সুযোগ – সুবিধা, বেতনাদি, সম্মান, অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। যদি প্রশ্ন উঠে তাদের বেতন কোথা থেকে আসে? উত্তর হবে – সরকার দেয়। সরকার টাকা কোথায় পায়? উত্তর হবে-জনগনের দেয়া ট্যাক্স থেকে। এই ৪টি শ্রেণির বেতন তো ট্যাক্স এর ভিতরেই। সুতরাং তাদের ট্যাক্স সেই চক্র আকারে বেতন আবার ট্যাক্স এভাবেই চলে। তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা কাদের?
দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হচ্ছে যারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। যারা প্রকৃতি থেকে নতুন কিছু উৎপাদন করে। তারা হলেন দেশের আপামর কৃষক, শ্রমিক, জেলে, উদ্যোক্তা, শিক্ষক , রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।
আমাদের মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন। এই ৬টি চাহিদা মেটানোর সাথে জড়িত আছে একজন উৎপাদনকারী। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়তো সকালের নাস্তা করবে মাখন পাউরুটি এবং ফলমূল ইত্যাদি দিয়ে। আর একজন দরিদ্র শ্রমিক সকালের নাস্তা করবে পান্তা ভাত, কাঁচা মরিচ দিয়ে। হয়তোবা তাদের দুজনের স্থান,মর্যাদা ও খাদ্যের নাম ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু দুজনের খাদ্যের উৎপত্তি কারক আপামর ভূমিদাস কৃষক। একজন কৃষক নিজে ফসল উৎপাদন করে আমাদের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের অভাব পূরন করে। একজন গার্মেন্টস কর্মী বস্ত্র, শ্রমিক দিনমজুর বাসস্থান, শিক্ষক শিক্ষার চাহিদা, ডাক্তার চিকিৎসার চাহিদা এবং অভিনেতারা চিত্তবিনোদন দিয়ে থাকে।তারা প্রত্যেকে নতুন কিছু উৎপাদন করছে।
দেশের অর্থনীতি টিকে আছে সাধারণ কৃষক, শ্রমিক,জেলে, কামার,কুমার,রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের উপর। অথচ তারা সবসময় সুযোগ-সুবিধা ভোগের বাহিরে থাকে। একজন কৃষক, শ্রমিকদের নিয়ে ভাববার সময় কারো নেই। তারা দিনদিন অবহেলিত হচ্ছে।
প্রতিবছর বন্যায় খরায় কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অধিকাংশ কৃষক জানেই না, দেশে পানি সহিষ্ণু, খরা সহিষ্ণু জাতের বিভিন্ন বীজ রয়েছে। তারা জানে না উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, মাটির লবনাক্ততা, গুনগত মান নির্ণয় করতে । তারা জানেনা কতটুকু জমিতে কী পরিমাণ রাসায়নিক বা জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। যার ফলে দিন দিন মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।যার দরুন কৃষক কৃষি কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। যা আমাদের জন্য মোটেও কল্যানকর নয়।
একজন কৃষকের পরিবার থেকে এখন আর কৃষক আসে না। একজন শ্রমিকের পরিবার থেকে কেউ শ্রমিক হচ্ছে না। এরকম ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের উপর চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।
একজন বাবার সহজ সরল,অজ্ঞ, অকর্মন্য ছেলেটাকেই শ্রমিক, কৃষক, জেলে শ্রেণি হতে হয়। অথচ এই অকর্মন্য ছেলেটাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই স্থানটিতে শিক্ষিত শ্রেণি নেমে আসলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে রাষ্ট্রীয় ঋণ পরিশোধ, অর্থনেতিক উন্নতি, মূদ্রাস্ফীতি হ্রাস এবং বেকারত্ব কমে আসবে। ইনশাআল্লাহ।
কৃষকদের সুবিধার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে । কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তারা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হবে। এখন প্রশ্ন হলো কতজন ছাত্র পড়াশোনা শেষ করে কৃষক হবে? মন্ত্রণালয়ের কতজন অফিসার কৃষকদের খোঁজ খবর নিবে?
একটি পরিবার তাদের সন্তানকে প্রথম স্বপ্ন দেখায় সরকারি চাকরি করার। অথচ পরিবারের উচিত প্রথমে সন্তানকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরবর্তীতে সফল না হলে চাকরি করা। কিন্তু আমরা আগে চাকরির পিছনে দৌড়াই, চাকরি না হলে পরবর্তীতে উদ্যোক্তা হই।
উদাহরণ দেখি- একটি দেশের প্রত্যেক নাগরিক সরকারের কাছে চাকরির আবদার করলো। নাগরিকদের মন রক্ষার্থে সরকার প্রত্যেককে চাকরি এবং ৫০০০০ টাকা করে বেতন দিলেন। সবাই খুশি হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্বামী তার স্ত্রীকে বললো নাস্তা দিতে। স্ত্রী বললো ৫০০০০ টাকা থাকার পরও বাসায় নাস্তা তৈরি করতে হবে? বাহির থেকে কিনে নিয়ে আসো। ভদ্রলোক বাহিরে এসে দেখে নাস্তার সকল দোকান বন্ধ। ভদ্রলোক ভাবলেন মুদি দোকান থেকে নাস্তা তৈরির জন্য কিছু কিনবেন, দেখল মুদি দোকানও বন্ধ। কোলাহলপূর্ণ রাস্তায় আজ কোনো গাড়িও নেই, যে পাশের বাজারে যাবে। হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসলেন। এখন প্রশ্ন হলো ৫০,০০০ টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন ভদ্রলোক নাস্তা ক্রয় করতে পারলেন না। এর কারণ এখন সবাই চাকুরীজীবি এবং সবার কাছেই আছে মাসিক বেতন ৫০,০০০ টাকা। তাই রিক্সাচালক রিকশা চালানো, নাস্তা ও মুদি দোকানদার দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন । এমন করে সবাই যদি উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় শুধুমাত্র চাকরির পিছনে দৌঁড়িয়ে। তাহলে একদিন দেখা যাবে আমাদের সকলের কাছেই টাকা আছে। কিন্তু টাকা দিয়ে ভোগ করার মতো কিছুই নেই। ফলে ঘটবে চরম মুদ্রাস্ফীতি। ১০ টাকা দামের আলু বর্তমানে ৬০ টাকা। যা ৬ গুন বেশি। এটা কী মুদ্রস্ফীতি বলবো না।
ঐতিহাসিক নেতাদের দিকে তাকাই যেমন- শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মজলুম জননেতা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী প্রমূখ নেতারা। সবসময় কৃষক শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার কথা ভাবতেন। তারা সবাই এই নিম্ন শ্রেনির পেশাজীবীদের জন্য লড়াই করেছেন।
তাই বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমরা আমদানিকৃত পণ্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে, নিজের দেশের কৃষক, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষক এবং কৃষিজমি রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই দেশের আর্থিক উন্নতি সম্ভব।
© Deshchitro 2024