এক্স-রে মেশিন থাকলেও নেই টেকনোলজিস্ট।


কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ২০২১ সালের মার্চের শুরুতে চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হয় ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। তিন মাস চালু ছিল এই সেবা। এরপর থেকে এক্স-রে মেশিনটি আর ব্যবহার হয়নি। ফলে মেশিনটি আর কাজে আসছে না কুতুবদিয়ার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায়। 

এতে, দীর্ঘদিন পর কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যুক্ত হওয়া ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি টেকনিশিয়ানের অভাবে পড়ে রয়েছে। এক্স-রে সেবার জন্য মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঝড়-তুফান মাথায় নিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে দ্বীপের বাইরে। জীবনের ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে প্রায় সময়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুতুবদিয়ার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়নি। অনেক দামি যন্ত্রপাতি থাকার পরও সেবা পাচ্ছেন না মানুষ। এক সময় বিদ্যুতের অভাব ছিল। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ছিল না দ্বীপে। সন্ধ্যাকালীন জেনেরেটরের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার করা হতো, যে কারণে হাসপাতালে তেমন কোনো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল না। যা ছিল তাও অযত্ন ও অব্যবহারে নষ্ট হয়েছে। দ্বীপে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের পর আমূল পরিবর্তন আসে স্বাস্থ্যসেবায়।অবশ্য তারা কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আমূেল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কুতুবদিয়ার সাবেক ইউএইচএন্ডএফপিও চট্টগ্রামের বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা নাদিমের কথা উল্লেখ করেছেন। 

জানা যায়, ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি সংযুক্ত হয়েছিল কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নির্দিষ্ট টেকনিশিয়ান ছিল না। তিনি হাসপাতালের একজন কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছিলেন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে চমেক হাসপাতালে চলে গেলে সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি মঞ্জুরিকৃত ১৬২ পদের ৮৫ পদে জনবল নেই। ২৯ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২১টি শূন্য। ২৫ জন স্বাস্থ্য সহকারীর ১৬টি পদ শূন্য। উপজেলার ৬টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য সরকার অনুমোদিত ৬ জন স্যাকমো পদের সবকটি শূন্য। হাসপাতালের ৫টি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সবকটি পদ শূন্য দীর্ঘদিন ধরে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা নাদিম জানান, তিনি যোগদান করার পর থেকে স্বাস্থ্যসেবার গুণগতমান উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। সফলতাও পেয়েছেন। জেলায় পরপর কয়েকবার শীর্ষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বীকৃতি পেয়েছেন। কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি তৈরি করেছেন জেলা শহরের আদলে। নিয়মিত রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। ডেলিভারি রোগীদের জন্য নজির স্থাপন করেছেন। গর্ভকালীন চেকআপ, অপারেশন থিয়েটার, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনএসইউ), ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও হাসপাতালের নিরাপত্তা বাউন্ডারি, অত্যাধুনিক হলরুম, মূল গেটসহ জরুরি বিভাগের নতুন ভবন নির্মাণ করে আমূল পরিবর্তন করেছেন। স্বল্পমূল্যে প্যাথলজি সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। তিনি আরো জানান, জনবলের অভাবে বর্তমানে কিছু সেবা দিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতদিন বেশকিছু এনজিওর সহযোগিতা পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু এনজিওর কার্যক্রমের সমাপ্তি হয়েছে। তাই বেগ পেতে হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জানিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে জুনিয়র কনসালট্যান্ট, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মতো প্রয়োজনীয় পদগুলোতে জনবল দেয়ার জন্য জানিয়েছেন। জনবল বাড়লে সেবার মান আরো বাড়ানো সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024